কলকাতা: তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসক পদে বদল আনে মমতার সরকার। সেখানে বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্যকে সরিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবারে বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক পদেও বদল আনল রাজ্য সরকার। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া বহু পুরসভায় নির্বাচন হয়নি৷ নির্বাচনের পরবর্তী রাজ্যের সব কর্পোরেশন এবং পুরসভায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ বদল করা হয় আইনও৷ বাড়ানো হয় প্রশাসকদের মেয়াদ৷ পরবর্তীতে একাধিক পুরসভার প্রশাসকও বদল করা হয়। এবারেও একই পথে হেঁটে বনগাঁ পুরসভার প্রশাসক পদে শঙ্কর আঢ্যকে সরিয়ে গোপাল শেঠকে দায়িত্ব দিল রাজ্য সরকার।
গোপাল শেঠ অবিভক্ত বনগাঁ বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক। পাশাপাশি, সরকার তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মেন্টরের দায়িত্ব দেয়। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর হিসাবে পাঁচটি বিধানসভার দায়িত্ব পান গোপাল। এই পাঁচটি আসনের মধ্যে স্বরূপনগর ছাড়া বাকি চারটিতেই পরাজিত হয় তৃণমূল। তারপরেও গোপালকে নতুন দায়িত্ব দিয়ে দল যে তাঁর উপরেই আস্থা রাখছে রাজনৈতিক মহলের কাছে তা স্পষ্ট।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালে পুরপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেন শঙ্কর আঢ্য। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী পরাজিত হন। বনগাঁ পুর-এলাকায় প্রায় ২০ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তারপরেই ১৪ জন কাউন্সিলর তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। অনাস্থা আনা ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন কাউন্সিলর পরবর্তীতে বনগাঁ উত্তরের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের হাত ধরে দল পাল্টে নাম লেখান গেরুয়া শিবিরে। সেসময়ও দল শঙ্করের পাশে ছিল বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পরে বিজেপিতে যাওয়া ৪ জন কাউন্সিলর ফের জার্সি বদল করলে সেবারের মতন টিকে যায় শঙ্কর নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড। বোর্ডের মেয়াদ শেষ হতেই শঙ্করকে পুরপ্রশাসক হিসাবে মনোনীত করে রাজ্য সরকার।
এরপর ইছামতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে বনগাঁ উত্তর বিধানসভা থেকে শঙ্কর আঢ্যকে প্রার্থী না করায় তাঁর অনুগামীরা বিক্ষোভে সামিল হন। জ্বলতে থাকে আগুন৷ পরে যদিও দলের তরফ থেকে তাঁকে বনগাঁ উত্তর বিধানসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দোরগোড়ায় পুরভোট। এমন সময়ে শঙ্করকে পুরপ্রশাসক থেকে সরিয়ে দেওয়াকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে গোপাল বাবু জানান, “দল যাকে যেভাবে দায়িত্ব দেবে, সেভাবেই কাজ করবো। প্রশাসক হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে বনগাঁর মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।” এবিষয়ে এখনও শঙ্কর বাবুর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷