bakibur rahman
কলকাতা: রেশন দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা পাচার, গরু পাচার, পুর নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি তালিকায় নতুন সংযোজন রেশন দুর্নীতি। আর রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান কী দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ইডি আধিকারিকরা।
আসলে যত দিন যাচ্ছে বাকিবুরের একের পর এক সম্পত্তির হদিশ মিলছে। এবার বাকিবুরের জোড়া ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেল দুবাইতেও। যার দাম ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা বলে তদন্তকারীদের ধারণা। এর আগে বাকিবুরের তিনটি রাইস মিল, দুটি ফ্লাওয়ার মিল, একাধিক হোটেল ও পানশালা, মার্সিডিজ বেঞ্জ, পোর্শের মত বিলাসবহুল গাড়ি-সহ বহু সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁর হোটেল রয়েছে বেঙ্গালুরুতেও। এই বিপুল সম্পত্তির মালিক কীভাবে হয়েছেন বাকিবুর তা নিয়ে তদন্ত চলছে। আর বেগতিক বুঝে দুবাইতে যে জোড়া ফ্ল্যাট রয়েছে বাকিবুরের, সেখানেই কী তিনি পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন?
ইডি সূত্রে খবর, গ্রেফতার হওয়ার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরই সপরিবারে দুবাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল ‘মন্ত্রীর ডানহাত’ বাকিবুরের! বাকিবুরের স্ত্রিকে জেরা করে ইডির তদন্তকারীরা জানতে পারেন, তাদের দুবাইয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা৷ এর আগে একাধিক দুর্নীতিতে নাম জড়ানো বিনয় মিশ্র দেশ ছেড়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতু’তে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন। শত চেষ্টা করেও তাঁর টিকি ছোঁয়া যায়নি। তবে কি রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ফেঁসে যেতে পারেন আগেভাগে আঁচ করেই বিদেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বাকিবুরও? এই জল্পনা চলছে।
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতিতে বেশ কিছু জায়গায় রেশন বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। বিপুল টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। এরপর গত বছরের এপ্রিলে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে তদন্তে নামে ইডি। আর সেই মামলাতেই গত সপ্তাহে ভোরবেলা থেকে কলকাতা, নদিয়া ও উত্তর চব্বিশ পরগনার বারোটি জায়গায় হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। কৈখালিতে বাকিবুরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটেও শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।
এছাড়া বাকিবুরের ঘনিষ্ঠদের বাড়িতেও তল্লাশি চলে। সেই সঙ্গে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। এরপর শুক্রবার ভোর রাতে ম্যারাথন তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর বাকিবুরকে গ্রেফতার করে ইডি। আদালতের নির্দেশে তাঁকে বারো দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে ইডি। এরপরই তাঁকে জেরা করে নানা তথ্য ও একের পর এক সম্পত্তির খোঁজ মিলতে থাকে। জানা যায় বিমানবন্দরের কাছে চিনারপার্কে বাকিবুরের একটি সাততলা হোটেল রয়েছে। সেই সঙ্গেই বেঙ্গালুরুতে তাঁর হোটেলের খোঁজও মেলে। এবার জানা গেল দুবাইতেও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে বাকিবুরের। তবে কী রেশন দুর্নীতি মামলায় আন্তর্জাতিক যোগ রয়েছে?
এই বিষয়টি যথারীতি ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। আর সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের ধারণা, সম্ভবত বাকিবুর বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষছিলেন। ইডি নিশ্চিত রেশন দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের কালো টাকা হাতে আসার পরই তা দিয়ে দুবাইতে জোড়া ফ্ল্যাট কিনেছিলেন বাকিবুর। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিক প্রভাবশালীর হাত মাথার উপর থাকার জন্যই বাকিবুর এই দুর্নীতি চালিয়ে যেতে পেরেছেন। সেই প্রভাবশালীদের খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা। এখানেই শেষ নয়, বাকিবুরের কৈখালির ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে একশোর বেশি সরকারি স্ট্যাম্প পাওয়া গিয়েছে। পাওয়া গিয়েছে একটি ডায়েরিও। তাতে রেশনের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী কোথায় কোথায় যেত তার উল্লেখ আছে। সরকারি স্ট্যাম্প কীভাবে বাকিবুরের ঘরে এল তা নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। ইডি নিশ্চিত একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিক এই রেশন দুর্নীতি মামলায় যুক্ত। তাই আগামী দিনে এই কাণ্ডে আরও কোনও নতুন নাম উঠে আসে কিনা সেটাই দেখার।