নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পাতায় যে সম্প্রদায়ের শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং পার্সি শরণার্থীর মাঝে একটিমাত্র শব্দ( মুসলমান)র অভাবে যখন গোটা দেশ জুড়ে অশান্তির আগুন জ্বলছে৷ তখন সেই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী তথা দেশের শাসকদলের প্রধান নরেন্দ্র মোদির ভাষণে উল্লিখিত একটি মাত্র বাক্য 'উনকে কাপড়ো সে হি পতা চল যাতা হ্যায়' আগুনে ঘৃতাহুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে নাস্তানাবুদ স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ৷ দফায় দফায় নানান যুক্তি খাড়া করে বুঝিয়ে চলেছেন ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নয়৷ প্রতিটি রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের অন্যান্য নেতা মন্ত্রীরাও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন পাখি পড়ানোর বুলি আওড়াতে৷
সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে করা কমেন্ট ঘিরে চরমে উঠল বিতর্ক৷ যদিও ওই কমেন্টকে হুমকি বলেই উল্লেখ করছে একাধিক সংবাদমাধ্যম৷ কিন্তু কি ছিল ওই পোস্টে? সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের টপার দেবস্মিতা চৌধুরী ডিগ্রি নেওয়ার পরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানান৷ এই ঘটনার পর ওই ছাত্রীর অভিভাবকরাও তার প্রতিবাদকে সমর্থন জানান৷ এই ঘটনা নেটিজেনদের নজরে আসতেই স্যোশাল মিডিয়ায় যেমন উপচে পড়ে উচ্ছাস৷ তেমনই দেখা যায় বিরূপ মন্তব্যও৷ এক বিজেপি সমর্থক বাংলার অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ সেই পোস্টে সমর্থন জানিয়ে কমেন্ট করে শেয়ার করেন বাবুল৷ আর সেখানেই যত বিপত্তি৷
মুসলিম যুবককে রীতিমতো দেশছাড়া করার হুমকি দিলেন৷ আর এরপরই শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এদেশের একজন নাগরিককে এভাবে দেশছাড়া করার হুমকি দিতে পারেন কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে সর্বস্তরে৷
যদিও বাবুল সুপ্রিয়র অসহিষ্ণু হওয়ার প্রবণতা অনেক আগেই প্রকাশ্যে এসেছে৷ এবারের ঘটনার প্রেক্ষাপট যাদবপুরের সমাবর্তনে সম্মান নিতে উঠে স্টেজে দাঁড়িয়েই সিএএ-র প্রতিলিপি ছিঁড়ে ফেলা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম দেবস্মিতা চৌধুরীকে নিয়ে৷ দেবস্মিতার ওই কাণ্ডের পর তাঁর বাবা-মা'ও জানিয়েছিলেন, মেয়েকে নিয়ে তাঁরা গর্বিত৷ এরপরই ফেসবুকে এক বিজেপি সমর্থক বাংলার অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷
সেই পোস্টকে সমর্থন জানিয়ে কমেন্ট করে কশেয়ার করেন বাবুল সুপ্রিয়৷ পাল্টা মুস্তাফিউর রহমান নামে এক মুসলিম যুবক কমেন্টে লেখেন,'বাবুল দা আপনি কতটা শিক্ষিত আর আপনার গুরু কত শিক্ষিত যে, কিনা গরু থেকে সোনা বার করে৷' এরপরই প্রচন্ড রেগে গিয়ে ওই কমেন্টের নিচেই বাবুল লেখেন, 'আগে তোমায় তোমার দেশে ফেরত পাঠাই, তারপর পোস্টকার্ডে জবাব দেব৷' এরপরই শুরু হয় জোরদার সমালোচনা৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই পোস্টে কমেন্ট করে সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ লেখেন 'বাবুল দা, এটাই ওর দেশ৷ ও এই দেশেই থাকবে৷ কারও বাবার ক্ষমতা থাকলে ওকে বের করে দেখাক৷ সংবিধানিক পদে থেকেও আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র এই ধরণের সাম্প্রদায়িক প্রতিক্রিয়া মেনে নিতে পারেনি সুশীল সমাজও৷ অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেছেন, আগে তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পী৷ সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে কিভাবে এই ধরণের সংকীর্ণ মানসিকতা পোষণ করেন তিনি?