কলকাতা: রাজনীতির আকাশে ধূমকেতুর মতো উত্থান ঘটেছিল বাবুল সুপ্রিয়র। যতটা ক্ষিপ্র ছিল তাঁর উত্থান, ততটাই দ্রুত গতিতে যেন পতনও ঘটে৷ বিধানসভায় ধাক্কা খাওয়ার পর মন্ত্রিত্ব খুইয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাসের পথে হাঁটার কথা ঘোষণা করে দেন তিনি৷ বেশ কিছু দিন বাবুল ছিলেন একেবারে শান্ত৷ এই নিঃস্তব্ধতা যে ঝড়ের পূর্বাভাস, তা বোধ হয় রাজনীতির কারবারিরাও বুঝতে পারেননি৷ শনিবার দুপুরে সকলকে চমকে দিয়ে ফুল বদলে ফেললেন তিনি৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেস যোগদান করলেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়৷
আরও পড়ুন- বাবুল তৃণমূলে! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই এখন সত্যি
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে আসানসোলে হেভিওয়েট শ্রমিক নেত্রী দোলা সেনকে হারিয়ে সংসদে যান বাবুল৷ তাঁর সেই উত্থান বহু রাজনৈতিক বোদ্ধাকেই হতবাক করেছিল৷ পুরস্কার হিসাবে ওই বছরই ৯ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় নগরোন্নয়ন, আবাসন এবং শহুরে দরিদ্র বিমোচন দফতরের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ ২০১৬ সালে ভারী শ্লিপ ও জন উদ্যোগ দফতরের প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাঁকে৷ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ফের আসানসোল থেকে জয়ী হন বাবুল৷ সেবার তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনকে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৩৭ ভোটে পরাজিত করেন৷
এত দূর পর্যন্ত ঠিকই ছিল৷ কিন্তু তাল কাটতে শুরু করে ২০২১-এর বিধানসভা ভোট থেকে৷ রকেটের গতিতে পতন ঘটল তাঁর৷ বাবুলকে টালিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী করেছিল গেরুয়া শিবির৷ কিন্তু সেখানে তৃণমূল প্রার্থী অরূপ বিশ্বাসের কাছে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত হন তিনি৷ তার ঠিক দুই মাসের মধ্যেই মন্ত্রিত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় বাবুল সুপ্রিয়কে৷ এর পরেই প্রকাশ্যে বোমা ফাটিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে৷’ তার পর একের পর এক বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন গায়ক সাংসদ৷ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে৷ এমনকী তিনি মুকুল রায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকেও টুইটারে ফলো করতে শুরু করেন৷ সেই সময়েই তাঁর দল বদলের জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছিল৷ তবে সেই জল্পনায় জল ঢেলে রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা ঘোষণা করেন তিনি৷ আজ আকস্মিক ভাবে তাঁর তৃণমূলে যোগদান সকলকে চকিত করে দিয়েছে৷
আরও পড়ুন- জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুরা, সমস্যা মোকাবিলায় গাইডলাইন প্রকাশ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের
রাজনৈতিক কেরিয়ারে অনেক বিতর্কেও জড়িয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়৷ বছর দুই আগে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হয়েছিলেন তিনি। শারীরিক হেনস্তা, নিগ্রহ, গালিগালাজ খেয়েও ক্যাম্পাস ছাড়েননি৷ এর আগে আসানসোলে এক ব্যক্তির পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছেন৷ আর বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারের মাঝে এক যুবককে চড় কষিয়ে ফাপড়ে পড়েছিলেন বাবুল৷