এগরা: গ্রামীণ চিকিৎসকের সঙ্গে বচসা। উত্তেজিত অবস্থায় ওই যুবক চিকিৎসককে খুনের পরিকল্পনা করেই ছুরি দিয়ে পেটে আঘাত। সেই ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত জখম চিকিৎসক। এরপর উত্তেজিত জনতা ওই যুবককে পিটিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে মৃত যুবকের নাম নাজিম উদ্দিন শাহা (৩৫)। মৃত যুবকের বাড়ি এগরা থানায় চাটলা গ্রামে। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার চিরুলিয়া এলাকায়। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এগরা থানার পুলিশ।
সূত্রের খবর, এগরা ১ ব্লকের চিরুলিয়া বাজারে নরেন্দ্র মিরদা নামে চিকিৎসকের চেম্বার রয়েছে। নরেন্দ্র মিরদা এলাকায় গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে যথেষ্ট নাম ডাক রয়েছে এলাকায়। গত কয়েকমাস আগে এগরা চাটলা গ্রামের নাজিম উদ্দিন শাহ সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল চিকিৎসক নরেন্দ্র মিরদা। বুধবার বিকেলে চিকিৎসকের চেম্বারে চড়াও হয় ওই যুবক বলে এমনটাই অভিযোগ। চিকিৎসককে খুনের পরিকল্পনা করেই ছুরি নিয়ে পেটে আঘাত করে ও লোহার রড দিয়ে মারধর করে ওই যুবক বলে অভিযোগ। চিকিৎসকের চিৎকার শুনে বাজারে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন ওই যুবকের কাছ থেকে চিকিৎসককে উদ্ধার করেন।
রক্তাক্ত অবস্থায় ওই চিকিৎসককে প্রথমে এগরা সুপার ফেসিলিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন গ্রামীণ চিকিৎসক নরেন্দ্র মিরদা।
চিকিৎসকের হামলার প্রতিবাদে সরব হন এলাকার বাসিন্দারা। ওই যুবকের উপর শুরু হয় গণপ্রহার। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় এগরা থানার পুলিশ। কোনও রকমে ওই যুবককে উদ্ধার করে এগরা সুপার ফেসিলিটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক নাজিম উদ্দিন সাহাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাটলা ও চিরুলিয়া এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নামে এগরা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার এগরা থানার পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
যদিও এগরা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। বরং রক্তাক্ত জখম চিকিৎসকের পরিবারের পক্ষ থেকে নাজিম উদ্দিন শাহার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। গোটা ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এগরা থানার পুলিশ। যদিও এ বিষয়ে এগরা থানার পুলিশ আধিকারিক ও কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিশেষ সূত্রে জানাগেছে, নাজিম উদ্দিন শাহা কর্মসূএে চেন্নাইতে হোটেলের কাজ করতো। গত চার মাস আগে তার আগে তার স্ত্রী রস্কনারা বিবি গর্ভবর্তী অবস্থায় ওই গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসে৷ তৎকালীন ওই চিকিৎসক মহিলার খারাপ আচরণ করে বলে অভিযোগ। এরপর গ্রামের মোল্লাদারকে বিষয়টি জানায়৷ এরপর ওই যুবক কর্মস্থল চেন্নাই চলে যান। সালিশি সভায় সিন্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। বুধবার সকালে চেন্নাই থেকে বাড়ী ফিরে নাজিম উদ্দিন শাহা। দুপুরে ৩ টা নাগাদ ছুরি দিয়ে পেটে আঘাত করে। লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে ওই যুবক বলে অভিযোগ। এরপর চিকিৎসক চিৎকার করে ছোঁটাছুটি করতে থাকে। স্থানীয়রা ওই যুবককে বেঁধে বেধড়ক গনপ্রহার শুরু করেন। এগরা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।