ঘাটাল: দুর্যোগের মুখে আশা জাগাচ্ছেন আশা দিদিরা৷ কখনও কোমর জলে নেমে বাড়ি বাড়ি পোলিও খাওয়াতে যাচ্ছেন, কখনও আবার জল সাঁতরে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধ৷ এখনও বন্যায় জলে ভাসছে ঘাটাল৷ এরই মধ্যে সাঁতার কেটে ওষুধ পৌঁছে দিলেন এক আশা দিদি৷ আবার নিজে নৌকা চালিয়ে দুর্গতদের কাছে ওষুধ নিয়ে হাজির হলেন অন্য এক দিদি৷ ঘাটালের সেই দুই আশাদিদির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷
আরও পড়ুন- রোজভ্যালি কাণ্ডে সক্রিয় ED, বাজেয়াপ্ত করা হল ২৭ কোটির সম্পত্তি
এই দুই আশা দিদির ছবি ছড়িয়ে পড়তেই তাঁদের নিয়ে জোড় চর্চা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘‘জেলার আশাকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। ঘাটালের এই আশাকর্মীরা স্বাস্থ্য দফতরের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।’’ দুই আশাকর্মীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ জেলাশাসক রশ্মি কমলও৷
দিনকয়েক আগে বন্যা প্লাবিত দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন আশাদিদিরা৷ বন্যার জল ভেঙে হাঁড়িতে শুইয়ে শিশুকে পালস পোলিয়ো টিকা খাওয়াতে নিয়ে এসেছিলেন এক বাবা। কোমর সমান জলে নেমে ওই শিশুকে পোলিও খাইয়েছিলেন আশাদিদিরা৷ এই ভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন অনেক আশাদিদি৷ দায়িত্ব পালনে নজির গড়লেন ঘাটালের বলরামপুরের বাসিন্দা আশাকর্মী শ্যামলী মান্না।
ঘাটালে বন্যার জল নামতে শুরু করেছে৷ কিন্তু এখনও জলমগ্ন বলরামপুরের মতো বেশ কিছু জায়গা৷ স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামলীদেবী জানতেন বলরামপুরে বেশ কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত। ওষুধ না পেলে তাঁদের বিপদ আরও বাড়বে৷ এদিকে গোটা এলাকা জল থৈথৈ করছে৷ মঙ্গলবার সকালে তাঁদের জন্য ওষুধ নিয়ে রওনা দেন শ্যামলীদেবী৷ কিন্তু তিনি দেখেন একটাও নৌকা নেই। জলমগ্ন ঘাটালে নৌকাই এখন যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু নৌকার জন্য আর অপেক্ষা করেননি শ্যামলীদেবী৷ সাঁতার কেটে তিনি পৌঁছে যান আক্রান্তদের কাছে। তাঁর সাঁতার কাটার সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরেই অবশ্য প্রশাসনের তরফে নৌকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়৷
মঙ্গলবারই আরও একটি ছবি ধরা পড়ে ঘাটাল থানার রথিপুরে৷ রীতা দোলই নামে অন্য এক আশাকর্মী নিজে নৌকা চালিয়ে ওষুধ পৌঁছে দেন আর্তদের কাছে। শ্যামলী ও রীতার এই দায়িত্ববোধ দেখে গর্বিত স্বাস্থ্য দফতর। শ্যামলীদেবীর কথায়, ‘‘আমি সাঁতার কাটতে জানি। ওষুধ না পেয়ে মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছিল৷ তাই সাঁতারেই ওষুধ পৌঁছে দিয়েছি। এটা তো আমাদের দায়িত্ব-কর্ব্যের মধ্যেই পড়ে।”