কলকাতা: দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে যেন খানিক নড়বড়ে দেখাচ্ছে তৃণমূলকে। ভোটের মুখে একের পর এক দলীয় নেতার দলত্যাগ প্রকাশ্যে এনেছে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে বিরোধীরাও। কিন্তু ঘাসফুল শিবিরের এই রোগ কি এবার বাসা বাঁধছে বিজেপিতেও? গেরুয়া গোষ্ঠীকোন্দলের ইঙ্গিত যেন সেই দিকেই আঙুল তুলছে।
বিধানসভা ভোট যখন দরজায় প্রায় কড়া নাড়ছে, ঠিক তেমন সময়েই একাধিক গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সামনে আসছে বিজেপির তরফ থেকেও। রাজ্যের নানা প্রান্তে দেখা দিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টির আদি-নব্য সংঘাত। ২০১৭ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ছেড়ে প্রথম গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন মুকুল রায়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত বহু তৃণমূল নেতাই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। শাসকদল থেকে আসা এইসমস্ত নতুন নেতাদের কদর বিজেপিতে এখন বিশাল। আর তাকেই ভালো চোখে দেখছে না আদি নেতারা।
গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলেই এখন শোনা যাচ্ছে অসন্তোষের ফিসফিস। ‘অন্য দলের ছাঁটাই নেতারাই দল চালাচ্ছেন, পুরোনোরা হয়েছেন ব্রাত্য’, এমনটাই অভিযোগ আদি নেতাদের।যাঁরা এতদিন দলের ঝান্ডা হাতে প্রচার চালিয়েছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে বড় বড় পদপ্রাপ্তি ঘটছে তৃণমূলের বিদায়ী নেতাদের। মালদহ থেকে বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া- চিত্রটা জেলায় জেলায় একই।
বিজেপির আদি-নব্য সংঘাতের সাম্প্রতিক উদাহরণ উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া, স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত থেকে দলীয় পতাকা গ্রহণ এসবের বিরুদ্ধেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন এলাকার বিজেপি কর্মীরা। প্রবীর ঘোষালকে শিশু পাচারকারী আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছেন তাঁরা। নীচুতলার কর্মীদের এই অসন্তোষের আঁচ কি দিল্লি অবধি পৌঁছোচ্ছে? উঠছে প্রশ্ন। শুধু নীচতলাতেই নয়, ক্ষোভের ইঙ্গিত মিলেছে উপরেও। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা মুকুল রায় গত বছর দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ পেলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাহুল সিনহা। সেই ছিল শুরু। তারপর থেকে প্রকাশ্যে হোক বা নেপথ্যে গেরুয়া শিবিরের আদি-নব্য সংঘাত চলছেই। আর বলা বাহুল্য তার আঁচ টের পাচ্ছে বাংলার রাজনৈতিক মহল।