anubrata
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি বীরভূম জেলায় কার্যত শেষ কথা ছিলেন। তাঁর ইশারাতেই নাকি গাছের পাতা পড়ত! তিনি অনুব্রত মণ্ডল। তৃণমূলের অন্যান্য জেলা সভাপতির তুলনায় অনুব্রত পুরোপুরি আলাদা। অনুব্রত একমাত্র জেলা নেতা তথা দলের একটি জেলার সভাপতি, যাকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতি অনেকটাই আবর্তিত হয়েছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে খবরের শিরোনামে আসতেন তিনি। কিন্তু গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর এক বছর ধরে জেলে রয়েছেন তৃণমূলের এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। তা সত্ত্বেও এতদিন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়নি তাঁকে। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। জেলা সভাপতির পদ থেকে সুকৌশলে সরিয়ে দেওয়া হল অনুব্রতকে।
ঘটনা হল বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের সংগঠনে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। আর সেখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পদ শূন্য রাখা। এভাবেই অনুব্রতকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিল তৃণমূল, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। অর্থাৎ অনুব্রতকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সরাসরি এই ঘোষণা না করেও কিছুটা সুকৌশলে তাঁকে সরানো হল বলেই মনে করা হচ্ছে। যে নতুন তালিকা তৃণমূল প্রকাশ করেছে সেখানে বীরভূম জেলা সভাপতি নামের পাশে কোনও ব্যক্তির নাম নেই। পরিবর্তে জেলা সভাপতি পদের পাশে লেখা রয়েছে ‘কোর কমিটি টু কমিটি’। অর্থাৎ অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে বীরভূম জেলায় তৃণমূলের নয় সদস্যের কোর কমিটিই দলের জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। জেলা সংগঠনের সমস্ত কাজকর্ম দেখভাল করবেন এই কমিটির সদস্যরা। সেই সঙ্গে বীরভূম জেলায় তৃণমূলের চেয়ারপার্সন পদে রইলেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জেলা সভাপতি হিসেবে অনুব্রতর নাম না থাকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি আশিস। আর এতেই পরিষ্কার দল থেকে অনুব্রতকে ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল তৃণমূল।
২০১০ সাল থেকে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি পদে ছিলেন অনুব্রত। তাঁর নেতৃত্বেই তৃণমূল এই জেলায় ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অনুব্রতকে নিয়ে প্রচুর বিতর্কও দেখা দিয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হন অনুব্রত। এরপর খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টতই অনুব্রতর পাশে দাঁড়ান। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেন বীরভূম জেলায় দলের সংগঠন তিনি নিজেই দেখবেন। এরপর নয় সদস্যের কোর কমিটি গঠন করে দেন বীরভূম জেলায়। কিন্তু অনুব্রতকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেবেন এমন আঁচ পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তবে কি বীরভূম জেলায় অনুব্রতকে ছাড়াই এবার তৃণমূলকে চলতে হবে? উল্লেখ্য বীরভূম জেলা তৃণমূল রাজনীতিতে অনুব্রতর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলেই পরিচিত আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই চেয়ারপার্সন পদে আশিসের থেকে যাওয়াটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু কি কারণে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি হিসেবে অনুব্রতর নাম রাখা হয়নি? আসলে তৃণমূল প্রথমে ভেবেছিল অনুব্রত হয়ত শীঘ্রই জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে তাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে অসুবিধায় পড়তে হয়নি বীরভূম জেলায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূমে অসম্ভব ভাল ফল করেছে তৃণমূল। এরপর বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি করা হয় অনুব্রতর বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে। তখনই অনুব্রতর দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এরপর তৃণমূলের একাধিক কর্মসূচিতে দেখা যায় ব্যানার, ফেস্টুনে অনুব্রতর ছবি নেই। তবে কি দুর্নীতির অভিযোগ অনুব্রত মণ্ডলের গায়ে সেঁটে যাওয়ায় লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই দায় আর নিতে চাইছে না তৃণমূল? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। সম্ভবত সেই কারণেই সুকৌশলে অনুব্রতকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দলের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সবার সামনে আসবে বলেই শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন। বর্তমানে তিহাড় জেলে বন্দি ‘বীরভূমের কেষ্ট’। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে গোটা বিষয়টি নিয়ে কি চলছে সেটা আঁচ করাই যায়। এমনও যে হতে পারে সেটা কোনও দিন দুঃস্বপ্নেও কী ভাবতে পেরেছিলেন অনুব্রত? উৎসবের মরসুমে দীপাবলির আলোক উৎসবে যখন গোটা রাজ্য ঝলমল করছে, ঠিক তখনই আঁধার নেমে এল অনুব্রতর রাজনৈতিক জীবনে। যে ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত।