মৌমিতা বিশ্বাস: এক ভয়াবহ বিপর্য়ের মুখে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ৷ ক্রমাগত বেড়ে চেলেছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ একের পর এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যুতে চওড়া ভাঁজ প্রশাসনের কপালে৷ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে জরুরি পরিষেবা ছাড়া কার্যস্ত স্তব্ধ গোটা দেশ৷ সংক্রমণ রুখতে প্রশাসনের তরফে বারবার সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ সেই সঙ্গে কোনও ব্যক্তি ভিন রাজ্য থেকে ফিরলে তাঁকে বারবার সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছেন ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা মানুষজন৷ অথচ এই বিষয়ে প্রশাসনকে জানানোর জন্য ফোন করা হলেও, মিলছে না কোনও উত্তর৷
গত রবিবারই দিল্লি থেকে চন্দননগরে নিজের বাড়িতে ফেরেন দুই বোন৷ তাঁদের মধ্যে একজন পড়ুয়া৷ অপর একজন দিল্লিতে কর্মরত৷ কিন্তু বাড়ি ফিরে সেলফ কোয়েরেন্টাইনে না থেকে তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাড়ায়৷ দোকান-বাজারেও দেখা গিয়েছে তাঁদের৷ আরও একটি পরিবার গত শনিবার রাজ্যে ফেরে৷ কিন্তু তাঁরা কোথায় গিয়েছিলেন, তা নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করছেন না৷ মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷ এই বিষয়ে জানানোর জন্য প্রথমে পুলিশ (১০০) ও পরে নবান্ন কন্ট্রোলরুম (০৩৩২২১৪৩৫২৬), দিদিকে বলো (৯১৩৭০৯১৩৭০) নম্বরে ফোন করা হলেও কোনও সাড়া মেলেনি৷ উত্তর পাওয়া যায়নি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা নম্বরে (১০৭০) ফোন করেও৷ চন্দননগর থানায় (০৩৩২৬৮৩১৮৩৮) ফোন করা হলেও, কেউ ফোন তোলেনি৷ বারবার ফোন রিং হয়ে গিয়েছে৷ অভিযোগ স্থানীয়দের৷ অন্যদিকে, বেশ কিছু নম্বরে ফোন করলে শোনা যাচ্ছে একটি যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর, ‘‘আপনার মূল্যবান সময়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা বজায় রাখছি, দয়া করে লাইনে থাকুন৷’’ তবে কি করোনা আতঙ্কে ফোন ধরতে চাইছে না পুলিশ-প্রশাসনও?
কলকাতার চিত্রও খুব একটা সন্তোষজনক নয়৷ বিভিন্ন জায়গায় খোলা রয়েছে দোকান-পাট৷ এমএন চ্যাটার্জী সরণি এবং রাজা বাজার চালপট্টি মার্কেট চত্ত্বরে খোলা রয়েছে বাজার৷ এই বিষয়ে পুলিশকে ফোন করে অভিযোগ জানানো হলে, বলা হচ্ছে আমরা মাইকে ঘোষণা করে এসেছি৷ কড়া পদক্ষেপ না করে শুধু ঘোষণা করেই দায় সারতে চাইছে পুলিশ৷ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, কেউ লকডাউন ভাঙলেই কড়া শাস্তি দিতে হবে৷ কিন্তু শাস্তি তো দূরের কথা, রমরমিয়ে চলছে কেনাবেচা৷ কিছু কিছু জায়গায় আবার রাস্তায় খেলতে নেমে পড়েছে মানুষজন৷ খাস শহর কলকাতার বুকে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷
আরও একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমআদমির মনে৷ আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে চলবে লকডাউন৷ ওষুধ, খাদ্যসামগ্রীর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ ছাড়া, বাইরে বেরনোর অনুমতি নেই কারোর৷ কিন্তু কোনও ব্যক্তি ওষুধ বা খাবার কিনতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, কিংবা অন্য কোনও বিপদের সম্মুখীন হলে কী ভাবে প্রশাসনের নজরে আসবে বিষয়টি? জরুরি নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও তো কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না৷ পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতায় লকডাউনের দিনগুলোতে নিশ্চিন্তে ঘুমতে পারবে তো সাধারণ মানুষ?