কলকাতা: আমতার ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু মামলায় নয়া মোড়৷ আত্মহত্যা করেননি আনিস৷ বরং তিনি দুর্ঘটনাজনিত হত্যার শিকার৷ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এমনটাই জানালেন সরকার পক্ষের আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়৷ সেই সঙ্গে প্রচ্ছন্নে তিনি স্বীকার করে নিলেন পুলিশের গাফিলতির কথা৷ পুলিশের ভূমিকায় রাজ্য যে সন্তুষ্ট নয়, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, আনিস খানকে মারার উদ্দেশ্য ছিল না পুলিশের৷ পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু পুলিশ যে ভাবে এসেছিল, বা তদন্ত করেছিল তা সঠিক ছিল না৷
এদিন আনিস মামলায় আইনজীবী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্ত পুলিশের পক্ষে সওয়াল করছি না। আত্মহত্যা হয়েছে, এ কথাও বলা হচ্ছে না৷ এটা দুর্ঘটনাজনিত হত্যা। কিন্তু, এখানে কোনও সাক্ষী নেই৷ সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা।’’ অ্যাডভোকেট জেনারেল এও বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট আইন মেনে পুলিশি তল্লাশি হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি স্বীকার করছি ঘটনাস্থলে পুলিশ উপযুক্ত ভূমিকা পালন করেনি। তাদের উচিত ছিল আনিসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। রেড আইন মাফিক কাজ হয়নি৷ তবে, আনিসকে খুন করা হয়েছে এমন কোনও তথ্য তদন্তে উঠে আসেনি।’’
আইনজীবী আরও জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ চিকিৎসক সৌম্য সরকার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করেন। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে এসএসকেএম-এর চিকিৎসক ইন্দ্রানী দাস সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ১ মে’র ময়নাতদন্তে ৪ থেকে ৭ দিনের পুরনো গভীর বাদামী ক্ষতের সঙ্গে ঘর্ষনের উল্লেখ রয়েছে৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শক্ত পৃষ্ঠে পড়ে যাওয়ার কারণে প্রধান আঘাত লাগে৷ ৩ ফুট দূরে রক্ত পড়েছিল৷
রাজ্যের পক্ষ থেকে এদিন আরও জানানো হয়, আনিস খানের ফোন হায়দরাবাদের ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে আইনজীবীর সঙ্গে কথোপকথনও পাওয়া গিয়েছে। এক আইনজীবী বলেছিলেন, ”তুমি এবার অ্যারেস্ট হবে।” কারণ আনিস একটি পকসো মামলায় জড়িত ছিলেন। আনিস জানতেন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে আসছে।
এজি এও বলেন, পুলিশের গাফিলতি আড়াল করা হবে না৷ তবে কোথাও খুনের প্রমাণ মেলেনি৷ আপাতত সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ বন্ধ রাখা হোক৷ বিচারপতিও সহমত পোষণ করেন৷ কারণ সিভিক ভলেন্টিয়াররা চুক্তিভিত্তিক হয়৷ তাদের কোনও দায়িত্ব থাকে না৷
CFSL রিপোর্টেও বলা হয়েছে, আনিস খান আত্মহত্যা করেননি। হয় কেউ তাঁকে কেউ ঠেলে দিয়েছিলেন অথবা তিনি কোনওভাবে পড়ে যান। তবে ছাদ থেকে পড়েই যে আনিসের মৃত্যু হয়েছে, তা স্পষ্ট৷ পলিগ্রাফ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এদিন। প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিতে হবে বলেও সওয়াল করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী।
এদিক, সিটের বিরুদ্ধে মূল অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন আনিসের পরিবারের আইনজীবী। তাঁদের দাবি, ”মৃত্যুর আগে দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু সেটা অবজ্ঞা করছে সিট (SIT)। ঠেলে ফেলা বা পরে যাওয়ার ইঙ্গিত আছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। সিট সেটাও অস্বীকার করছে।” পরবর্তী শুনানি হবে ১৭ জুন৷
আনিস খানের বাবা বলেন, পুলিশ আমার ছেলেকে খুন করার জন্যই এসেছিল৷ সেদিন পুলিশ আমাকে দিয়ে ঘর খোলাল৷ একজন পুলিশ বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল৷ বাকি তিনজন সিভিক পুলিশ উপড়ে উঠে গেল৷ তিনতলায় গিয়ে ওরা আনিসকে মারধর করে সেখান থেকে ফেলে দিল৷ আমার পিছন দিয়েই আনিস উপর থেকে পড়ে গেল৷ বেরনোর সময় কিছু পুলিশ বলে গেলেন, স্যার আমাদের কাজ সফল৷ এর পরেই তারা ছুটে বেরিয়ে যায়৷ তবে পলিগ্রাফ টেস্টে তিনি এখনও রাজি নন বলে জানান আনিসের বাবা৷ তিনি সিবিআই-এর অপেক্ষায় আছেন৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>