পাটনা: দু’হাজার উনিশ, বিজেপি ফিনিশ! গত লোকসভা নির্বাচনের আগে এমনই স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই লোকসভা নির্বাচনের আগে জানুয়ারি মাসে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে মমতার উদ্যোগে বিরোধী জোটের ‘মেগা শো’ দেখেছিল গোটা দেশ। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। একের বিরুদ্ধে এক লড়ার যে বিষয়টি নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি বিভিন্ন রাজ্যে। ফলস্বরূপ বিজেপি একাই তিনশোর বেশি আসনে জিতে ফের কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছে। চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। দশ মাস পর আবার লোকসভা নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে বিরোধীরা জোট বাঁধার লক্ষ্যে পাটনায় বৈঠকে মিলিত হলেন।
একটাই, সম্মিলিত জোট করে একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা। অর্থাৎ দেশের প্রত্যেকটি লোকসভা আসনে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের একজনই প্রার্থী থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা কি এবারেও সম্ভব হবে? কারণ বিরোধী দলগুলির একে অপরের প্রতি যে অ্যালার্জি রয়েছে এতদিন ধরে, তা রাতারাতি কোন মলম বা অ্যান্টিবায়োটিকে সেরে যাবে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। আর সেই কারণেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধী জোটের বৈঠককে কটাক্ষ করে বলেছেন, যতই তাঁরা হাত মেলানোর চেষ্টা করুন না কেন, সেটা সম্ভব হবে না। এটা বিরোধীদের শুধুমাত্র ফটোসেশন হয়েছে। আগামী লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় ফিরবে বিজেপি, এমনটাই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। তৃণমূলের সঙ্গে একই ভাবে সিপিএম তথা বামেদের সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত। আম আদমি পার্টির সঙ্গে পাঞ্জাব এবং দিল্লিতে কংগ্রেসের সম্মুখ সমরের কথা সবাই জানেন। কিছু দিন আগেও জেডিইউ দলের সঙ্গে আরজেডি’র সম্পর্ক যে কতটা খারাপ ছিল তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। বর্তমানে তারা হাতে হাত মিলিয়ে বিহারে সরকার চালালেও সেই দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত কিন্তু বইছে। তাই রাতারাতি সব কিছু দূরে সরিয়ে রেখে বিরোধী দলগুলি হাতে হাত মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে, এটা হওয়া খুবই কঠিন। কারণ সেই ফর্মুলা মানতে গেলে কংগ্রেস তিনশোর বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। অর্থাৎ কমবেশি ২৫০টি আসনে প্রার্থী থাকবে না কংগ্রেসের। অন্যান্য দলগুলির ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা যাবে।
আগামী মাসে হিমাচল প্রদেশের সিমলায় ফের বিরোধী জোটের বৈঠক হবে। আলোচনা হবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে। বিরোধী নেতাদের দাবি, এভাবেই তাঁদের জোট আস্তে আস্তে মাথা তুলে দাঁড়াবে। তবে ঘটনা হল ইতিমধ্যেই আম আদমি পার্টি অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। যে বিষয়টিকে খুব একটা ভাল চোখে দেখছে না অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। বৈঠকের শুরুতেই যদি এভাবে তাল কাটে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল, তাহলে আগামী দিনে কি হতে পারে সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বিজেপি বিরোধী ‘মহাজোট’ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার বাতাবরণ থেকেই যাচ্ছে।