কয়লা মাফিয়া লালাকে নিয়ে কেন চিন্তিত মমতা? প্রশ্ন শাহের, কারা পেতেন ‘মাসোহারা’?

কয়লা মাফিয়া লালাকে নিয়ে কেন চিন্তিত মমতা? প্রশ্ন শাহের, কারা পেতেন ‘মাসোহারা’?

 

কলকাতা: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন বাংলায় দাঁড়িয়ে সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ঠিক তখনই কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার ডেরায় তল্লাশি চালাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি৷ সঙ্গে ছিল আয়কর দফতর৷ ওই তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ৪০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে খবর৷ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ রাজ্যকে না জানিয়ে কেন বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে কেন কেন্দ্রীয় সংস্থা তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে? কেন্দ্রীয় বাহিনীর উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাল্টা আক্রমণ করেছেন খোদ অমিত শাহ৷ ‘কয়লা মাফিয়া’দের ডেরায় অভিযান চললে কেন চিন্তিত হচ্ছেন ‘মমতাজি’? প্রশ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর৷

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, অবৈধ কয়লা খনির কারবারে যুক্ত ‘লালা’৷ অভিযোগ, বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে ‘সাদা’ করার কারবার ছিল এই মাফিয়ার৷ আয়কর দফতরের তদন্তে জানা গিয়েছে, কয়লা মাফিয়া লালা বিপুল পরিমাণ টাকা এক প্রভাবশালীর আত্মীয়ের কাছে ‘মাসোহারা’ হিসাবে পৌঁছে যেত নগদ টাকা৷ কিছু না হলেও তা মাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকা, অভিযোগ দফতরের৷ বৃহস্পতিবার কলকাতা-সহ রাজ্যের ২২টি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে খবর৷ কোন প্রভাবশালীদের ‘মাসোহারা’ পাঠানো হত, তা জানার কাজ শুরু করে করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ বেআইনি কয়লা খনি ছাড়াও লালার আয়ের উৎস কী, কোথা থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা এল তা জানার কাজ শুরু করেছে ইডি ও আয়কর দফতর৷ আগামী সপ্তাহে লালাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর৷

শুধু লালা নন, একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে বাংলায় দফায় দফায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ তল্লাশি অভিযান ঘিরে ইতিমধ্যেই তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজ্য-রাজনীতির ময়দান৷ রাজ্যকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে কেন তাল্লাশির নামে হেনস্থা করা হচ্ছে? নবান্ন থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী৷ (দেখুন ভিডিও)  শুক্রবার অমিত শহারের দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠকের পরপর পাল্টা বৈঠক ডেকে একের পর এক অভিযোগ খণ্ডন করলেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়৷ জানান, পিএম কেয়ার্স ফান্ডের টাকার কোনও হিসাব কেন কেন্দ্র দিচ্ছে না? আত্মনির্ভর ভারত স্লোগান দিয়ে সরকারি সংস্থা কাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে? কালয়া ব্লক কাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে? তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ৷

পাল্টা দিয়েছেন অমিত শাহ৷ তল্লাশি অভিযান চললে ‘মমতাজি’ কেন চিন্তিত হচ্ছে? লালার সঙ্গে ‘মমতাজি’র কী সম্পর্ক রয়েছে? সেটি প্রকাশ্যে আসা প্রয়োজন বলেও কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন অমিত শাহ৷ (দেখুন ভিডিও)
 


 

তল্লাশি অভিযান নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি শিবিরে তর্জা চললেও আয়কর দফতর সূত্রে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ সূত্রের খবর, বেআইনি কয়লা খনির কারবার চালিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছেন লালা৷ ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক লালার বিরুদ্ধে রয়েছে আয়কর ফাঁক দেওয়ার অভিযোগ৷ চলত কালো টাকা সাদা করার কাজ৷ আয়কর দফতর সূত্রে খবর, লালার নামে-বেনামে একাধিক সংস্থা রয়েছে৷ রয়েছে ১৫০ কোটি টাকার ইক্যুইটি শেয়ার৷ ১৪৫ কোটির শেয়ার ইতিমধ্যেই বিক্রিও হয়ে গিয়েছে৷ যাতে কালো টাকা সাদা করা যায়! সবটাই হয়েছে কাগজে-কলমে৷ অভিযোগ, বাস্তবে সেই টাকার কোনও লেনদেনের কোনও সন্ধান পাননি তদন্তকারীরা৷ অভিযোগ, ব্যবসা বাড়াতে ঘুরপথে ‘মাসোহারা’ টাকা পৌঁছে দেওয়া হত প্রভাবশালীদের৷ যাতে ব্যবহায় কোনও বাধা না হয়৷

অভিযোগ, টাকা পাঠানো হত প্রভাবশালীর আত্মীয়ের কাছে৷ কর্মচারীদের বসানো হত ভুয়ো সংস্থার ডিরেক্টর পদে৷ যদিও তা কাগজে-কলমে৷ ‘মাসোহারা’র বদলে মিলত বেআইনি খনি থেকে তোলা কয়লা পাচারের ছাড়পত্র৷ দুবাই থেকে শুরু করে  সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডেও খোলা হয়েছে একাধিক ভুয়ো সংস্থা৷ বিদেশে ব্যবসার আড়ালে টাকা পৌঁছে যেতে বিভিন্ন সংস্থায়৷ হাওলা মারফত টাকা দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল বলে অভিযোগ৷ভুয়ো সংস্থার সন্ধান শুরু করতেই রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজ বিভিন্ন তথ্য পেতে থাকে৷ তারপর চলে অভিযান৷ গোটা ঘটনা জানতে ইতিমধ্যেই লালাকে তলব করেছে ইডি ও আয়কর দফতর৷ তদন্তের গুরুত্ব বুঝে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে সিবিআই৷ দিল্লির নির্দেশ এলে সিবিআইও মাঠে নামতে পারে বলে সূত্রের খবর৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − 2 =