পাঁশকুড়া: স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার৷ কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথটা একেবারেই মসৃণ ছিল না৷ বাবা পেশায় দিনমজুর৷ ছোট থেকেই অভাবের সংসারে আর্থিক টানাপোড়েনের মাঝে বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি৷ তবুও হার না মানা মনোভাব আর কঠিন লড়াই চালিয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করেন মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার বাহারপোতা গ্রামের কার্তিক মাইতি৷ একটাই লক্ষ্য ছিল, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার৷ তাই হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করার পর স্থানীয় কিছু লোকের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে তিনি পাড়ি দেন মার্কিন মুলুক৷ সেখানে কার্নিভাল ক্রুজ নামে এক জাহাজ সংস্থায় কুকের (রাঁধুনি) কাজ পান কার্তিক৷
জীবনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছিল এই বঙ্গসন্তানের৷ মোটা বেতনের চাকরি পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন তিনি৷ ভেবেছিলেন এবার হয়তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন৷ প্রতিষ্ঠা পাবেন জীবনে৷ আশা ছিল, বিদেশের মাটিতে টাকা উপার্জন করে হাসি ফোটাবেন পরিবারের মুখে৷
দশ মাস ক্রুজে কাজ করার পর পাঁশকুড়ায় গ্রামের বাড়িতে ফেরেন কার্তিক৷ ফেরার পরই সমস্ত ঋণের টাকা শোধ করে বাকি টাকা তুলে দেন পরিবারের হাতে৷ কিন্তু ইতিমধ্যেই মার্কিন আকাশে ঘনিয়েছিল করোনার কালো মেঘ৷ গোটা বিশ্বকে গ্রাস করতে শুরু করে করোনা৷ লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান৷ ফলে আমেরিকায় আর ফেরা হয়নি কার্তিকের৷
এদিকে, হাতে জমানো টাকাও প্রায় শেষ৷ হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় দেশে উপার্জনের পথও বন্ধ৷ অগত্যা পেট বাঁচাতে সবজি বিক্রি শুরু করেছেন কার্তিক মাইতি৷ তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বাবার কাজকর্মও বন্ধ৷ সংসারে টানাটানি শুরু হয়েছে৷ তাই বাধ্য হয়েই সবজি বিক্রির পথ বেছে নিয়েছি৷ যতটুকু উপার্জন হবে, তা দিয়ে অন্তত সংসারটা তো চলবে৷ আর আমেরিকায় ফেরা! সে আশা এখন বিশ বাও জলে৷
নজর থাকুক AajBikel.com-এর পাতায়…