বাড়িতে এসে পাত পেড়ে খেয়েও কথা রাখেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! অর্থাভাবে হচ্ছে না বিভীষণ-কন্যার চিকিৎসা

বাড়িতে এসে পাত পেড়ে খেয়েও কথা রাখেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! অর্থাভাবে হচ্ছে না বিভীষণ-কন্যার চিকিৎসা

বাঁকুড়া: কেউ কথা রাখেনি! আর তাই সংসার চালিয়ে ‘অসুস্থ’ মেয়ের চিকিৎসা খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামের  বিভীষণ হাঁসদার।

অথচ এক বছর আগে ভোটের সময় রাজনৈতিক প্রচার সফরে এসে প্রান্তিক আদিবাসী সমাজের এই মানুষটির মাটির দাওয়ায় বসে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ্। আর সেই সৌজন্যে সংবাদ শিরোনামে আসেন প্রত্যন্ত গ্রামের এই মানুষটি। অমিত শাহ্ ফিরে যাওয়ার পর ঘনঘন যাতায়াত বাড়ে শাসক তৃণমূল থেকে বিরোধী বিজেপি নেতাদের। বিভীষণ হাঁসদার ‘অসুস্থ’ মেয়ে রচনা হাঁসদার যাবতীয় চিকিৎসার খরচ চালানোর অঙ্গীকার করে তৃণমূল- বিজেপি দু’পক্ষই। মিডিয়াতেও সেকথা ফলাও করে প্রচার হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। মিডিয়ার ফ্ল্যাশ লাইটের আলো সরে যেতেই সব পক্ষের সব প্রতিশ্রুতি ফাঁকা আওয়াজে পরিনত হয়েছে বলে অভিযোগ।

অমিত শাহ্ যে মাটির দাওয়ায় বসে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন ঠিক সেই জায়গাতে বসেই অসহায় বিভীষণ হাঁসদা বলেন, এখন স্বামী-স্ত্রীর যৌথ রোজগারে কোন রকমে সংসার চলে। মেয়ের চিকিৎসা বাবদ খরচ প্রতি মাসে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। অমিত শাহ্ ফিরে যাওয়ার পর তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই মেয়ের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তৃণমূলের তরফে মাত্র একমাস ওষুধ দিলেও ‘সরবরাহ নেই’ অজুহাত দিয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির ডাঃ সুভাষ সরকার চার মাস ওষুধ সরবরাহ করলেও এখন তা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।  এমনকি অমিত শাহ্ ‘বাইরে নিয়ে গিয়ে’ মেয়ের চিকিৎসা করানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পূরণ করা হয়নি বলে বিভীষণ হাঁসদা দাবি করেন।

বিভীষণ হাঁসদার মেয়ে, বি.এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী রচনা হাঁসদা বলেন, বাবা-মা খুব কষ্ট করে আমার পড়াশুনা ও চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছেন। মূলতঃ সুগারের সমস্যায় সে দীর্ঘদিন ভুগছে। এই অবস্থায় সরকারি সাহায্য খুব জরুরি বলে সে জানায়। বিভীষণ হাঁসদার বৃদ্ধা মা ফুলমনি হাঁসদা বলেন, ‘সবাই বলেছিল পাশে থাকব, এখন কেউ নেই’। তাঁর ছেলে ভীষণ কষ্ট করে সংসার ও চিকিৎসা চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ সুভাষ সরকার বলেন, বিভীষণ হাঁসদার মেয়ের চিকিৎসার ব্যায়ভার আমরা নিয়েছি। এনিয়ে কিছু মিডিয়ায় অপপ্রচার করা হচ্ছে। কলকাতার এক প্রখ্যাত চিকিৎসক তাকে দেখছেন। মোদিজীর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর আমি ওঁদের বাড়ি গেছি। প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা আছে, আর তা সংশ্লিষ্ট দোকান থেকে বিনামূল্যে আনার কথা অভিভাবকের। আর তা যদি না করা হয় তার দায়িত্ব অভিভাবককেই নিতে হবে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে  জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র দিলীপ আগরওয়াল স্পষ্টতই স্বীকার করে নেন ‘কোথাও ভুল ত্রুটি হচ্ছে’। জেলা প্রশাসন ও তাঁর দলের পক্ষ থেকে বিভীষণ হাঁসদার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার দায়ভার নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্ত্তী সময়ে তা করা হয়নি। এবিষয়ে তিনি জেলাপ্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *