নিজস্ব প্রতিনিধি: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর রোজই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ডান, বাম, অতিবাম সবকটি সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা লাগাতার আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। এমন অবস্থা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষ স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারছেন না। কখন অবরোধ হবে, কারা অবরোধ করবে, তার উত্তর নেই কারও কাছে। ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলেও বাধা পড়ছে।
ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদ আন্দোলন হবে, তার অভিঘাত রাজ্য রাজনীতিতে পড়বে, দোষীদের কঠিন শাস্তি চাইবে সবাই, এসব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আন্দোলনকারীদের বড় অংশের লক্ষ্য কি সেটাই, নাকি তাঁদের মনের মধ্যে অন্য কোনও ভাবনা কাজ করছে? রাজনৈতিক মহল মনে করে এভাবে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি সবকটি ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। আর তাদের পিছনে রয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন। এখানে শাসক দল তৃণমূল থেকে বিরোধী সিপিএম বা বিজেপি, সবার ক্ষেত্রেই কথাটা প্রযোজ্য। অতি বাম সংগঠন আরএসএফ পর্যন্ত ঘটনা থেকে ফায়দা তুলতে চাইছে বলে অভিযোগ।
ঘটনা থেকে ফায়দা তুলতে চেষ্টার কসুর করছেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন শুভেন্দু। এরপর শুভেন্দুকে কালো পতাকা দেখান আরএসএফের এক সমর্থক। এরপর বিজেপি যুব মোর্চার কর্মীদের সঙ্গে আরএসএফের হাতাহাতি বেধে যায়। গুরুতর আহত হন এক ছাত্র। যদিও শুভেন্দুর অভিযোগ তাঁকে খুন করার চক্রান্ত করা হয়েছিল। এই অভিযোগ এনে যাদবপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন তিনি। পাল্টা তৃণমূলের দাবি শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বসে নেই সিপিএমও। সুজন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে হয়েছে মিছিল। অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল তাদের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির শক্তি বাড়াতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে রাজন্যা হালদারের উপরে। আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে যাদবপুরে ঢুকতে। সব মিলিয়ে বাম, অতিবাম এবং দক্ষিণপন্থী সংগঠনগুলি ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়াতে চাইছে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে।
কিন্তু এক ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এই ধরনের স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি দেখতে চায় না রাজ্যবাসী। প্রতিবাদ হোক, কিন্তু তার লক্ষ্য থাকুক অন্য। সেখানে কেন ছাত্র সংগঠনগুলির নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়বেন? ইতিমধ্যেই মৃত ছাত্রের বাবা হাতজোড় করে সবার কাছে আবেদন করে বলেছেন, এই ঘটনায় যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি খারাপ না হয়। নতুন করে যেন হিংসা ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু সেই আবেদন শুনছে কে! সবমিলিয়ে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় এই ধরনের রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠছে। এই ধরনের রাজনীতিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন রাজ্যবাসী, এমনটাই চান শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।