কলকাতা: সর্বদলীয় বৈঠকের পর নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি জানান, এদিন সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সৌজন্যমূলক পরিবেশেই বৈঠক হয়েছে৷ আলোচনা এবং সমালোচনার মধ্যে দিয়েই উঠে এসেছে বেশ কিছু বিষয়৷ সেই বিষয়গুলি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, উম্পুনের বিষয়ে সমস্ত রাজনৈতিকদলগুলি মিলিতভাবে একটা ডেপুটেশন নেবে৷ এর জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এই কমিটিতে থাকবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ, বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, আরএসপি’র মনোজ বাবু, সিপিআই-এর স্বপন বন্দোপাধ্যায় প্রমুখরা৷ সর্বদলীয় রেজলিউশনে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সে বিষয়ে খসড়া তৈরি করবে এই কমিটি৷ এই কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এদিন সর্বদলীয় বৈঠকে গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনা নিয়েও কথা হয়েছে৷ এছাড়াও আলোচনা হয়েছে সুন্দরবন নিয়ে৷ বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন৷ ঠিক করা হয়েছে, এই বিষয়ে নীতি আয়োগকে একটা চিঠি লেখা হবে৷ যাতে টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে পারে নীতি আয়োগ৷ এই মাস্টার প্ল্যানের মধ্যে দিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করা হবে৷ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাহায্য নিয়েও এই প্ল্যান তৈরি করতে পারে নীতি আয়োগ৷
এছাড়াও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, হকার, পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার দাবি জানিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল৷ এবিষয়ে টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ মেনে কাজ করা হবে৷ উম্পুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যকে আরও আর্থিক সাহায্য দেওয়া উচিত বলেই মনে করে সবকটি রাজনৈতিক দল৷ প্রতি দলই মনে করে করোনা নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে৷ পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে অন্যান্য রোগীকেও৷ এই বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি৷ তাই রাজ্যের মুখ্য সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে নয়া গাইড লাইন তৈরি করার জন্যে৷ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নেওয়া হচ্ছে৷ রোগীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে৷ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মানুষকে৷ এই সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছে সবকটি রাজনৈতিক দল৷
যে সকল জায়গায় টেস্টিং ল্যাব নেই, সেই সকল এলাকায় ল্যাব তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আনুরোধ করা হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের তরফে ৩ কোটি মাস্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে৷ যাতে স্কুল-কলেজের প্রতিটি ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের গরিব মানুষদের মধ্যে তা পৌঁছে দেওয়া যায়৷ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বেশ কিছু জায়গা থেকে বঞ্চনার অভিযোগ এসেছে৷ উম্পুন ত্রাণের টাকা যেন সবাই পায়, তা দেখতে হবে৷ কোনও বঞ্চনা সহ্য করা হবে না৷ এমন সমস্যা হলে বিডিও প্রশাসনকে তা জানানোর নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বঞ্চিতরা প্রয়োজনে সাদা কাগজে দরখাস্তও করতে পারেন৷ ন্যায্য দাবি হলে তা অবশ্যই পূরণ করা হবে৷ ইতিমধ্যে ২১০০ টি অভিযোগ জমা পরেছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, সতর্ক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে হবে৷ যাঁদের নাম বাদ গিয়েছে সাত দিনের মধ্যে তাঁদের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে হবে৷ তবে অবশ্যই তাঁদের দাবি ন্যায্য হতে হবে৷ তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব থাকা মানেই কেউকেটা নয়৷ অন্যায় করার অধিকার কারও নেই৷ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে৷ করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষেও সওয়াল করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ১ জুলাই পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি৷ তবে মিলবে ছাড়৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব কিনা, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷