কলকাতা: দেখতে দেখতে পুজো শেষ৷ বিষাদের সুরে বিদায় জানানোর পালা মাকে৷ উমা আমাদের কাছে ঘরের মেয়ে৷ বছরে একবার স্বামীর গৃহ থেকে বাপের বাড়ি আসেন তিনি৷ দশমীতে আবার কৈলাসে ফেরার পালা৷ বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, এই বছর মায়ের আগমন হয়েছিল দোলায়৷ যার অর্থ মারক৷ তবে এই বছর মায়ের গমন গজে৷ যার অর্থ ফলশস্যপূর্ণ বসুন্ধরা৷ তবে কি আবার হারানো রূপ ফিরে পাবে বিশ্ব? আলোর দিশা দেখাচ্ছে শাস্ত্র৷
আরও পড়ুন- বিষাদের সুরে নিরবে বিদায় মায়ের, হল না সিঁদুর খেলা-মাতৃ বরণ
শাস্ত্র অনুসারে সপ্তমীতে হয় দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমীতে হয় গমন। সাধারণত প্রতি বছর সপ্তমী ও দশমী কী বার পড়ছে, তার ওপর নির্ভর করে দেবীর কিসে আগমন এবং গমন হবে৷ এই বছর মা এসেছিলেন দোলায়৷ যার অর্থ মড়ক কিংবা মহামারী। যা এক বাস্তব সত্য৷ বছর পড়তেই শুরু হয় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ৷ মার্চ মাস থেকে চড়তে থাকে গ্রাফ৷ সারা বিশ্বের মানুষ এই মারণ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছে৷ তবে শাস্ত্রের বিধান বলছে, এই বছর মায়ের গমন হয়েছে গজে বা হাতিতে৷ গজকে দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন বলে মনে করা হয়। গজে দেবী আগমন কিংবা গমন ঘটলে, তা মর্ত্যবাসীর জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। যার ফলে বসুন্ধরা শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে, সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি বজায় থাকে এবং সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়। আসুন দেখে নেওয়া যাক মা দুর্গার কোন বাহন কীসের প্রতীক-
দোলা : দোলা অর্থাৎ পালকিতে আগমন বা গমন কোনওটাই শুভ নয়৷ এটি মহামারী বা মরকের প্রতীক।
নৌকা: নৌকা হল বন্যার প্রতীক। তবে অনেকেই বলে থাকেন, নৌকায় দেবী দুর্গার আগমন হলে সে বছর ভালো ফসল হয়৷
গজ : গজ বা হাতিতে আগমন বা গমন অত্যন্ত শুভাশুভ বলে ধরা হয়৷ এটি শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়।
ঘটক: ঘটক বা ঘোড়ায় আগমন বা গমনের অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো অবস্থা। যুদ্ধ-বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লব ইত্যাদির সংকেত হল ঘটক।
শাস্ত্র মতে কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন যদি একই বাহনে হয়, তাহলে তা অত্যন্ত অশুভ। প্রসঙ্গত, গত বছরই দেবীর আগমন এবং গমন হয়েছিল ঘোটকে। যার প্রভাবেই সারা বিশ্ব করোনা অতিমারীর কবলে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
আরও পড়ুন- বাঙালিদের কাছে দশমী মানেই সিঁদুর খেলা, জানুন এর তাৎপর্য
অন্যদিকে গজ হল বিশ্বকর্মার বাহন। এটি শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। গজে আগমন বা গমন হলে মা দুর্গার আশীর্বাদে যেমন বসুন্ধরা শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে৷ তেমনই বিশ্বকর্মার আশীর্বাদে পৃথিবীতে কৃষিকাজ এবং অন্যান্য শিল্পের উন্নতি ও প্রসার হয়। তাই পণ্ডিতরা আশাবাদী, দীর্ঘ কয়েক মাসে করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে এবার হয়তো ইতি পড়বে৷ মা দুর্গা তাঁর সঙ্গে নিয়ে যাবেন পৃথিবীর সমস্ত অশুভ শক্তি৷ এ বিশ্বে বিরাজ করবে শান্তি।