তানসেনের রাগ শুনিয়ে তরুণীকে কোমা থেকে ফেরালেন চিকিৎসক ডা. সন্দীপ কর

শ্যামলেশ ঘোষ: উত্তর-ভারতীয় সঙ্গীতশাস্ত্র বর্ণিত আশাবরী ঠাটের অন্তর্গত রাগ, দরবারী কানাড়া। কথিত আছে, মােগল সম্রাট আকবরের সভাগায়ক মিঞা তানসেন এই রাগের স্রষ্টা। প্রথাগত চিকিৎসার সঙ্গে নিয়ম করে সেই দরবারী কানাড়া রাগ শুনিয়ে তরুণীকে কোমা থেকে ফেরালেন কলকাতার জনৈক চিকিৎসক। মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকরীভাবে এই অসাধ্যসাধন করেছেন যিনি, তাঁর নাম ডা. সন্দীপ কর। এসএসকেএম হাসপাতালের

তানসেনের রাগ শুনিয়ে তরুণীকে কোমা থেকে ফেরালেন চিকিৎসক ডা. সন্দীপ কর

শ্যামলেশ ঘোষ: উত্তর-ভারতীয় সঙ্গীতশাস্ত্র বর্ণিত আশাবরী ঠাটের অন্তর্গত রাগ, দরবারী কানাড়া। কথিত আছে, মােগল সম্রাট আকবরের সভাগায়ক মিঞা তানসেন এই রাগের স্রষ্টা। প্রথাগত চিকিৎসার সঙ্গে নিয়ম করে সেই দরবারী কানাড়া রাগ শুনিয়ে তরুণীকে কোমা থেকে ফেরালেন কলকাতার জনৈক চিকিৎসক। মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে অত্যন্ত কার্যকরীভাবে এই অসাধ্যসাধন করেছেন যিনি, তাঁর নাম ডা. সন্দীপ কর। এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সন্দীপ আকাশবাণী কটক এবং ভুবনেশ্বর দূরদর্শন কেন্দ্রের একজন বেহালাবাদকও। পাশাপাশি, বিগত কয়েকবছর ধরে চিকিৎসাব্যবস্থার অতীব প্রাচীন ধারা মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে রােগারােগ্যের ওপরে পরীক্ষানিরীক্ষাও চালাচ্ছেন তিনি। তার আসল বাড়ি ওড়িশায়।




(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

তরুণীর নাম সঙ্গীতা দাস। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন সঙ্গীতা। সেই মারাত্মক অসুখের প্রভাবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে হতে একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে। গত নভেম্বরের ৭ তারিখ কোমায় চলে যান তিনি। সৰ চিকিৎসা ব্যর্থ হলে তাকে ইন্সটিটিউট অব পােস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে (এসএসকেএম) স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানতে পারেন, কোমায় ঢলে পড়া সঙ্গীতার মস্তিষ্কের একাংশে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তাকে ফেরানাের সব রকম চেষ্টা চালাতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। সঙ্গীতাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চলতে থাকে নিউরােলজিকাল ট্রিটমেন্ট। সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ওষুধ এবং পথ্য। পাশাপাশি, সঙ্গীতার জন্য সঙ্গীত থেরাপির সাহায্য নেন ডা, সন্দীপ কর। ইন্দ্রিয়ানুভূতির সক্রিয়তা বুঝতে চেষ্টা করেন। ঘ্রাণেন্দ্রিয় এবং স্বাদেন্দ্রিয় মাপতে সুগন্ধ ও লবণ প্রয়ােগের সাহায্যও নেন চিকিৎসকরা। প্রথাগত চিকিৎসার পাশাপাশি সঙ্গীতাকে রােজ তিনবেলা ২৪ মিনিট ধরে দরবারী কানাড়া রাগ শােনানাে হতে থাকে। ফলও মেলে হাতেনাতে। মিউজিক থেরাপি চলাকালীন তরুণীর অবস্থার সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তারা। ক্রমে তার চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। চোখের পাতা এবং হাত-পা নড়তে শুরু করে। বােঝা যায়, চিকিৎসায় সাড়া দিতে শুরু করেছেন তিনি। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে দু’সপ্তাহের মধ্যেই কোমা থেকে ফিরে আসেন সঙ্গীতা। চিকিৎসক ডা. সন্দীপ কর জানিয়েছেন, এখন সঙ্গীতা অনেকটাই সুস্থ। চামচে করে তাকে খাওয়ানাে হচ্ছে। “জল খাব” বা “বাবা কোথায়” ইত্যাদি কথাও বলতে পারছেন তিনি। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চলেছেন তরুণী, আশাবাদী সন্দীপ।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

পাঠকের জন্য তথ্য, প্রাচীনকাল থেকেই শরীর এবং মনের প্রশান্তিতে এবং রােগ সারাতে সঙ্গীত মােক্ষম দাওয়াই হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে এই পদ্ধতির উল্লেখও রয়েছে। মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলােতে নির্দিষ্ট মাত্রায় ত্বরণ ঘটিয়ে সম্পূর্ণ শরীর ও মনকে এক অনন্য অনুভূতি দিতে সক্ষম সঙ্গীত। তাই সঙ্গীতার ওপর সঙ্গীত থেরাপি প্রয়ােগের সাফল্যে খুশি চিকিৎসক ডা. সন্দীপ কর জানিয়েছেন, সঙ্গীতের নিরাময়ী আলাে এসে ঘুচিয়ে দিয়েছে সঙ্গীতার মস্তিষ্কের অন্ধকার।

ছবি, সন্দীপ করের ফেসবুক থেকে নেওয়া৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর জানতে ফেসবুক পেজ লাইক করুন facebook.com/Aajbikal ও aajbikel.com-এ ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 6 =