কলকাতা: দীর্ঘ ১১ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেলেন লালগড় আন্দোলনের নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ টানা ১১ বছর কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে আজ শনিবার তিনি ছাড়া পান৷ গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে দুর্গা অষ্টমীর দিন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশ লালগড় থেকে জনসাধারণ কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোকে গ্রেপ্তার করে৷ আনলফুল অ্যাকটিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট বা ইউএপিএ ধারা-সহ মোট ২৮টি মামলায় একদা মমতা ঘনিষ্ঠ ছত্রধরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ৷ দীর্ঘ ১১ বছর সাজা কাটার পর সব কটি মামলা থেকে মুক্তি পান তিনি৷ গত বছর যাবজ্জীবন সাজা তুলে নেয় কলকাতা হাইকোর্ট৷ ঝাড়খণ্ডের একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলায় জমিন পাওয়ার পর সমস্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ছত্রধর৷ গত বৃহস্পতিবারঝাড়খণ্ডের শেষ মামলা থেকে জামিন পাওয়ার পর আজ প্রেসিডেন্সি থেকে মুক্তি পান ছত্রধর৷
এর আগে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায় ছত্রধর মাহাতোর যাবজ্জীবন সাজা৷ গত বছর ১৪ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, ছত্রধর মাহাতোর যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হবে৷ গত বছর সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও ঝাড়খণ্ডের একটি মামলার কাছে মুক্তি পাননি তিনি৷ গত ২০১৫ সালে ইউএপিএ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ মেদিনীপুর আদালতের তরফে ছত্রধর, সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন ও সাগেন মুর্মুকে দোষী সাব্যস্ত করার পর প্রিজন ভ্যানে দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ছত্রধর৷
কেননা, পরিবর্তনের আমলে জঙ্গলমহলের আন্দোলন পর্বে ছত্রধরের পাশে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একই মঞ্চে দু’জন করেছিলেন একাধিক সভা৷ মমতা তখন বিরোধী নেত্রী৷ সে কথা মনে করিয়ে আদালত চত্বরে ছত্রধর জানিয়েছিলেন, তৃণমূল এখন ক্ষমতায়৷ আমাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতিও দিয়েছিল তৃণমূল৷ অথচ, সেই আন্দোলনের জন্যই আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা করা হয়েছে৷ ২০০৯ সালে সেপ্টেম্বরে লালগড়ের বীরকাঁড়ে গ্রেপ্তার হন ছত্রধর৷ তাঁর বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা দায়ের হয়৷ ৩৭টিতে জামিন পাওয়ার পর এবার ২০০৯ সালে কাটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় মুক্তির পথে ছত্রধর৷
পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা, এক সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে নামার পর প্রায় ১১ বছর জেলে থেকে মুক্তি পেয়ে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে ফের একবার ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ কেননা, তৃণমূলকে নিয়ে আন্দোলন করার পর সেই ‘বন্ধু’ ছত্রধরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহী মামলা দেওয়া ও পরে গ্রেপ্তারির ঘটনায় বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারেন জনগণের কমিটির নেতা৷ মমতার সঙ্গে ছত্রধরের ঘনিষ্ঠাতা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে রেয়ছে নানান বিতর্ক৷ এবার জেল থেকে মুক্তির পর রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে ছত্রধর মুখ খোলেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা৷ সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কাছে ছত্রধর ইস্যু জঙ্গলমহলে প্রধান কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষক মহলের৷
২০০৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেলের ভিতর থেকেই নির্বাচন লড়েন ছত্রধর৷ বন্দিমুক্তি কমিটি গঠন হওয়ার পরও মুক্তি পাননি ছত্রধর৷ তবে ক্ষমতায় আসার আগে ছত্রধরের সঙ্গে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছত্রধরের ঘণিষ্ঠতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল শাসক দল সিপিএম৷ একই মঞ্চে দেখাও গিয়েছিল মমতা ও ছত্রধরকে৷ তবে কী কাজ ফুরোতেই ছত্রধরকে এভাবে সরালেন মমতা? প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক ছত্রধর অনুগামীরা৷ ছত্রধর অনুগামীদের অভিযোগ, পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করেছিল তাঁদেরই দেশদ্রোহী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হল পুলিশ৷
২০০৯ সালে কাটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় ছত্রধর থেকে শুরু করে সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেনস, সগুন মুর্মু, রাজা সরখেল, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়দের গ্রেপ্তার করা হয়৷ তাঁদের মুক্তির আর্জিতে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী শেখর বসু৷ ওই মামলায় বিরোধিতা করেন সরকারপক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত ও পিপি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়৷ কিন্তু, বিস্ফরণের ঘটনায় যথেষ্ট প্রমাণের অভাব থাকায় রাজা সরখেল, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়দের মুক্তি দেয় ছত্রধর থেকে শুরু করে সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেনস, সগুন মুর্মুর যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়৷ ২০০৯ বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৫ মে মাসে মেদিনীপুরের দায়রা আদালত ছত্রধরদের দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়৷ এর পরই হাইকোর্টের মামলা গড়ায়৷ (ফাইল ছবি)