শিক্ষক ছেলের বাবার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম, তবুও সন্তান-সুখে খুশি অসহায় বৃদ্ধ

শিক্ষক ছেলের বাবার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম, তবুও সন্তান-সুখে খুশি অসহায় বৃদ্ধ

হাবড়া: ছেলে হাইস্কুলের শিক্ষক৷ কিন্তু তাঁর বাবার ঠিকানা আজ বৃদ্ধাশ্রম!

তীতের স্মৃতি বুকে আগলে বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে দিন কাটছে বছর ৬৫-র মিহির রায়ের৷ উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়ার বাসিন্দা মিহিরবাবু বলেন, আজও মনে পড়ে ছেলের জন্য, পরিবারের জন্য কী কী করেছি৷ একসময় গ্রামে গ্রামে শাড়ি-কাপড় ফেরি করে ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন৷ দিনরাত পরিশ্রম করে ছেলেকে মানুষ করার পর এই বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে কাটানোর যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁকে৷ তবে ছোট্ট তাবু থেকে বৃদ্ধাশ্রমের ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে৷ আজ শত কষ্ট বুকে নিয়েও একজন বাবার প্রার্থনা, আমি মরে গেলেও, ওঁদের জন্য মঙ্গল কামনা করব৷ 

অনেক কষ্টে ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করেছিলেন মিহিরবাবু৷ ছেলে বিজয় রায় আজ হাইস্কুলের শিক্ষক৷ কিন্তু ছেলের বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পায়নি বাবা৷ বাধ্য হয়েই বাড়ির সামনে ত্রিপল খাটিয়ে ছিলেন তিনি৷ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়৷ 
 

 

একটি বেসরকারি সংস্থায় সিকিউরিটির কাজ করতেন মিহিরবাবু৷ লকডাউনে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি৷ কিন্তু ফিরে দেখেন বাড়ি তালা বন্ধ৷   খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মাকে নিয়ে কর্মস্থল মেদিনীপুরে চলে গিয়েছেন তাঁর ছেলে৷ কোথাও যাবার পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাড়ির বাইরে উঠোনে ত্রিপল খাটিয়ে ২২ দিন কাটান তিনি৷ প্রতিবেশিদের সাহায্যে কাটছিল দিন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুলিশ-প্রশাসনের নজরে আসে বিষয়টি৷ একজন শিক্ষকের এই আচরণে নিন্দার ঝড় ওঠে রাজ্যজুড়ে৷  

ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজের টাকায় ওই বাড়ি করেছি৷ ওটা আমার বাড়ি৷ ওই বাড়ির তালা আমি খুলব না৷ বাবার যদি আমাদের সঙ্গে থাকতে হয়, মেদিনীপুরে আসতে হবে৷ আমার কাছে৷’’ মিহিরবাবু অভিযোগ, ওই বাড়িটি তাঁর৷ হাবড়া পুলিশের দ্বারস্থ হলে, সেখান থেকে বলা হয়, বাড়ির জমি যেহেতু ছেলের নামে রেজেস্ট্রি রয়েছে, তাই ঘরে ঢুকতে গেলে বৃদ্ধকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে৷ তবে হাবড়া পুলিশ-প্রশাসন মিহিরবাবুর পাশে দাঁড়ান৷ ছেঁড়া তাবু থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় হাবড়া পুরসভার বিবেকানন্দ ভবনে৷ সেখানে অন্যান্য আবাসিকদের সঙ্গে মিহিরবাবুর দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে পূর্বাচল আনন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *