কলকাতা: প্রয়াত বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র৷ রবিবার বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ শিল্পীর ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী সবার অগোচরে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য৷ তাঁর প্রয়ানে শোকের ছায়া সংস্কৃতি মহলে৷ তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা৷ তিনি বলেন, বহু দিনের সহকর্মী ও সুহৃদ হিসেবে মনের মনিকোঠায় থাকবেন৷
আরও পড়ুন- বদলাচ্ছে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি, উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল
দীর্ঘ দিন ঘরেই অসুস্থ ছিলেন নাট্য কিংবদন্তি শম্ভু মিত্র আর তৃপ্তি মিত্রর কন্যা৷ রবিবার বিকেল ৩টে ৪০৷ বেহালার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন শাঁওলি মিত্র৷ বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর৷ শিল্পীর ইচ্ছা মতো একদন আড়ালে অনাড়ম্বরভাবে সিরিটি শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁর৷ এর পরেই তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আনা হয়৷ তাঁর প্রয়াণে সংস্কৃতি মহলে শোকের ছায়া৷
বাংলার রঙ্গমঞ্চে বছরের পর বছর দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছেন শাঁওলি মিত্র। পঞ্চম বৈদিকের একের পর এক নাটকে মঞ্চে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। যুক্তি তক্ক আর গপ্পোয় বঙ্গবালার চরিত্রে তাঁর অভিনয় অমর হয়ে থাকবে। ২০০৩ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান এই কিংবদন্তী নাট্যশিল্পী৷ ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী সম্মান পান শাঁওলি৷
সিঙুর আন্দোলনের সময় পথে নেমেছিলেন তিনি৷ প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছিলেন শম্ভু-কন্যা৷ বাম সরকারের বিরোধিতায় মুখ হয়েছিলেন৷ এর পর বাংলা অ্যাকাডেমির প্রধান হন শাঁওলি। কিন্তু ২০১৮ সালে হঠাৎ করেই সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন তিনি। শরীর ক্রমশ ভেঙে পড়তে থাকে৷ এর পর ২০২০ সালে একটি ইচ্ছাপত্র লেখেন শাঁওলি৷ সেই ইচ্ছাপত্রে তিনি তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দায়িত্ব দিয়ে যান অর্পিতা ঘোষের ওপর। সই সঙ্গে জানান, তাঁর মৃত্যুর পর যেন কাউকে মৃতদেহ দেখতে দেওয়া না হয়৷ বাবা শম্ভু মিত্রর মতোই কন্যা শাঁওলি মিত্রের ইচ্ছা ছিল তাঁকে যেন ‘ফুলভারে’ বিদায় জানানো না হয়। এমনকী হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে রাজি ছিলেন না তিনি৷
খুব ছোট বয়স থেকেই মঞ্চাভিনয়ে সাবলীল শাঁওলি মিত্র। প্রথমে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরবর্তী সময়ে ‘পঞ্চম বৈদিক’ নামে নিজস্ব নাটকের দল গড়ে তুলেছিলেন শম্ভু মিত্রের কন্যা। এরপর একে একে ‘নাথবতী অনাথবত্’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘কথা অমৃতসমান’-এর মতো একাধিক জনপ্রিয় নাটক বাংলার মানুষকে উপহার দিয়ে গিয়েছেন শাঁওলি মিত্র।