বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ! কতটা বাস্তবায়িত হবে নবান্নের নির্দেশ?

নিজস্ব প্রতিনিধি: পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এমনকী বাজি কারখানার মালিক ভানু বাগেরও মৃত্যু হয়েছে ওড়িশার কটকের হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। আর বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে কলকাতা তথা রাজ্যের বেআইনি বাজি কারখানাগুলি বন্ধে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা ফের যাতে কোথাও না ঘটে সেই লক্ষ্যে কড়া পদক্ষেপ করছে নবান্ন। বৃহস্পতিবার নবান্নের তরফে একগুচ্ছ নির্দেশ দেওয়া হল সমস্ত পুলিশ সুপার এবং কমিশনারকে। তাতে রাজ্যের সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বেআইনি বাজি কারখানার কর্মীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির কথাও বলা হয়েছে।
নবান্নের ওই নির্দেশিকায় পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের বলা হয়েছে, বেআইনি বাজি তৈরির সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। বেআইনি বাজি কারখানাগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে অবিলম্বে সেগুলি বন্ধ করে দিতে হবে তা। বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আর বাজেয়াপ্ত করা বাজি আদালতের নির্দেশ মেনে নষ্ট করতে হবে বলে জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বাজি উদ্ধার হলে অল্প অল্প করে তা নষ্ট করতে হবে। উল্লেখ্য পেটের দায়ে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষ বাজি কারখানায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। তাই তাঁদের স্বার্থে নতুন ভাবে কর্মসংস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এগরার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ আগেও বাজি কারখানা চালাতেন। তারপর গ্রেফতার হন। পরবর্তীকালে জামিনে মুক্তি পেয়ে নতুন করে কারবার চালু করে দিয়েছেন। এর পুনরাবৃত্তি রুখতে নবান্ন স্পষ্ট জানিয়েছে, বেআইনি বাজি প্রস্তুতকারকরা যাতে আবার একই কাজ না করেন তা দেখতে হবে স্থানীয় থানাকেই।
বাম জমানা থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের আমলে রাজ্য জুড়ে প্রচুর বেআইনি বাজি কারখানা রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ। বহুবার বেআইনি কারখানা বন্ধ করা বা অবৈধ বাজি কারখানার কারবারিদের গ্রেফতার করা হলেও এটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা যায়নি। আসলে কোনও ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রশাসন কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কথা বলে। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু থিতিয়ে যায়। এবারেও সেই একই ঘটনা ঘটবে না তো? উল্লেখ্য এর আগে বহুবার দেখা গিয়েছে চোলাই মদের কারখানা বন্ধ করার জন্য রাজ্য প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু অভিযোগ, কিছুদিন থেমে থাকার পর আবারও রমরমিয়ে চলছে চোলাই মদের কারখানা। ফের যদি চোলাই মদ খেয়ে বড় অঘটন ঘটে যায় তখন আবার নড়েচড়ে বসবে প্রশাসন, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাই বেআইনি বাজি কারখানার ক্ষেত্রেও কী তাই হবে? এগরা কাণ্ডের পর রাজ্য সরকার কড়া হাতে এই অনিয়ম বন্ধ করার কথা বলেছে। সেই লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কতটা বাস্তবায়িত হবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তাই বেআইনি বাজি কারখানা চিরতরে বন্ধ করতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হয় সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।