কলকাতা: তৃণমূলের নাম ব্যবহার করে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার অভিযোগ এনে ‘তৃণমূলের শিক্ষক সেলের আহ্বায়ক’ জয়দেব গিরি বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির৷ আজ জয়দেব গিরির বিরুদ্ধে দমদম থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছেন অশোক রুদ্র৷ গোটা ঘটনার পিছনে শাসক দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’র গন্ধ পাচ্ছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও বিজেপি টিচার্স সেল৷
আজ সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক অশোক রুদ্র, জয়দেব গিরির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে একটি ছবি পোস্ট করেন৷ সেখানে সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র সরকারের সিল-প্যাড-সহ একটি বয়ান উল্লেখ করা হয়েছে৷ দমদম থানায় অভিযোগ জানানো দাবি জানিয়ে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তৃণমূল কংগ্রেস শিক্ষা সেলের নামে বেআইনিভাবে একটি সংগঠন চলছে৷ বিনা অনুমতিতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সদর কার্যালয় ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে৷ গত ৩ মার্চ তারিখে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা সেলের কনভেনার দাবি করে ও কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বেতন কেটে নেওয়ার জন্য দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি জানিয়ে শিক্ষকদের প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন৷ আমাদের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র ও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিবের নির্দেশে এই অভিযোগ৷’ ওই ব্যক্তির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও সাফ উল্লেখ করেছে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন৷
যদিও এই অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ অন্যদিকে অভিযুক্ত জয়দেব গিরি জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দল করেন৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আলাপ-আলোচনা করেছেন৷ বলেন, ‘‘দলের একাংশের বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ জানিয়েছি বলেই কি আমার বিরুদ্ধে এরকম ব্যবস্থা নেওয়া হল? আমি এই নিয়ে আর বিতর্ক বাড়াতে চাইছি না৷ দল যদি বলে আমাকে আর রাখবে না, আমি মাথা পেত নেব৷’’
সম্প্রতি ‘তৃণমূলের শিক্ষক সেলে’র আহ্বায়ক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে জয়দেব গিরি জানিয়েছিলেন, মানবিকতার খাতিরে করোনা মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন অনুযায়ী ৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেওয়া হোক৷ তাতে উপকৃত হবে সরকার৷ মহামারীর দিনে সরকারের পাশে থাকার বার্তাও দেন তিনি৷ ওই সংক্রান্ত দাবি কর্মচারী মহলে বিতর্ক তৈরি করে৷ পর তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করার দাবি জানানো হয়৷ গোটা ঘটনায় শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দল মনে করছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি৷
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা জানিয়েছেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের অতিমারী মোকাবিলায় ত্রাণ তহবিলে দান ও বেতন কেটে নেওয়া সংক্রান্ত তৃনমুল শিক্ষা সেলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে এল৷ যাতে শিক্ষক তথা কর্মচারী মহল উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত৷ সমস্যা সমাধানে অনলাইনের পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার দাবি রাখছি আমরা৷’’
বিজেপি টিচার্স সেলের প্রাথমিক শাখার রাজ্য কো-ইনচার্জ সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘‘গত ৩ এপ্রিল জয়দেব বাবু লিখিত ভাবে করোনা মোকাবিলায় সরকারি কর্মচারীদের সহযোগিতা করার জন্য আবেদন করেছেন৷ অথচ আজ এক সপ্তাহ পর এই ব্যাপারে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের আর একটি গ্রুপ মুখ খুলছে৷ এটা হাস্যকর ব্যাপার৷ তৃণমূল কংগ্রেসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মতামত ছাড়া এই ধরনের আবেদন জয়দেববাবু কখনও করতে পারতেন না৷ এই ধরনের আবেদনে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শিক্ষক সমাজ ও সরকারি কর্মচারীবৃন্দ যখন ধিক্কার জানাচ্ছেন, তখন তৃণমূল নিজেদের মুখ রক্ষা করার জন্য নিজেদের অন্য একটি গোষ্ঠীকে দিয়ে ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করছেন৷ জয়দেববাবু দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের শিকার হলেন৷’’