কলকাতা: দুর্নীতির জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আরজি কর!খাট, ওষুধ, সরঞ্জামেই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি!আরজি কর অন্যান্য হাসপাতালকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল।কাকে বলে করাপশন,সিবিআই এর দুঁদে তদন্তকারী অফিসাররাও তাজ্জব বনে যাচ্ছেন।
আরজি করের পর্দা ফাঁস না হলে হয়তো সকলের কাছে অজানাই থেকে যেত যে হাসপাতালের বেড নষ্ট হলে, তা সারিয়ে ফের ব্যবহার করেও দেখানো হতো কেনা হয়েছে নতুন খাট। এক দুই নয়, প্রতি মাসের এক ঘটনা। শুধু খাট নয়, এইভাবে সব মিলিয়ে বেড, ওষুধ, অস্ত্রোপচার, চিকিৎসার সরঞ্জাম খাতেই আরজি করে মাসে অন্তত ৭-৮ কোটি টাকার দুর্নীতির কারবার চলত বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক হিসেব। আর এই সবকিছুর মাস্টারমাইন্ড আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ?
সিবিআই বলছে, “আর জি করের দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা মিলে ওষুধ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন। সুমনের ‘হাজরা মেডিক্যাল’ সংস্থা মারফত ওষুধ কেনার নথি রয়েছে। যার বেশির ভাগটাই আসলে কেনা হত না। কিন্তু কাগজে-কলমে কেনা হয়েছে দেখানো হত।” এমনকি তদন্তকারীদের দাবি, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বা স্যালাইন ব্যবহারের করেও বিপুল খরচ দেখানোর অভিযোগ মিলছে। মানে, মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধের তারিখ বদলে ব্যবহার করা হত। যে ওষুধের কার্যকারিতা কম। কিন্তু কয়েক মাস পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যায়। আকছার এমন ওষুধ কাজে লাগানো হত, তদন্তে উঠে এসেছে তদন্তকারীদের। অস্ত্রোপচারের নানা সরঞ্জাম কেনার ভুয়ো নথি তৈরি করেও ধাপে ধাপে প্রায় কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
আর খাটের ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা তো সাঙ্ঘাতিক। হাসপাতালে তিন ধরনের খাট কাজে লাগে। সাধারণ রোগীদের যে খাট, তার এক-একটি ‘বেডের’ দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা। কিছু বিশেষ চিকিৎসার জন্য ভর্তি রোগীর ‘বেডের’ দাম ৭০-৮০ হাজার টাকা। আর অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিশেষ প্রযুক্তি বিশিষ্ট খাটের দাম প্রায় আড়াই-তিন লক্ষ টাকা। সিবিআই সূত্রে দাবি, মাসে মাসে এরকম ১৫-২০টা বিভিন্ন ধরনের বেড কেনা হয়েছে বলে ভুয়ো নথি তৈরি করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ধারাবাহিক ভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে। খাট পুরনো বা বিকল হলে তা কর্তাদের বিশ্বস্ত সংস্থাকে দিয়ে মেরামত করিয়ে ফের ব্যবহার করা হত। দেখানো হত, নতুন খাট কেনা হয়েছে। কসবার একটি সংস্থা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এত বড় চক্র সন্দীপ ঘোষ একা নিশ্চয়ই চালাতেন না। হাসপাতালের কেউ সেক্ষেত্রে এই দুর্নীতিতে জড়িত কিনা সেটাও তো জানা জরুরি। সিবিআই এর দাবি, না একা সন্দীপকে অভিযোগে বিদ্ধ করা যায় না। হাসপাতালের নানা বিভাগের প্রধানদের কী ভূমিকা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরই বা আর জি করের নথি যাচাইয়ে কী করত, তাও খতিয়ে দেখছে সিবিআই। মনে করা হচ্ছে, এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় আরও রহস্য উদঘাটন হতে পারে। তবে, এর সাথে সাথে আরেকটা প্রশ্নও তুলছে সাধারণ মানুষ। খোদ কলকাতার বুকে রাজ্যের প্রথম সারির একটা হাসপাতালের ভেতর যদি এরকম করাপশন চলে, যেখানে বলা যায় ফুল সিস্টেমটাই কোরাপটেড। তাহলে অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে রোগী চিকিৎসার আড়ালে কী কী চলে?