কলকাতা: ভোটের কাজে গিয়ে পাঁচ দিন পরও নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়৷ রাজ্য সরকারের আধিকারিকের নিখোঁজ রহস্য প্রকাশ্যে না এলেও ফের ভোটের কাজে গিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু ভোটকর্মীর৷
বুনিয়াদপুরের শ্যামাপল্লী এলাকায় রির্জাভে থাকা ভোটকর্মীর মৃত্যু ঘিরে চূড়ান্ত উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ভোটকর্মী মহলে৷
বুনিয়াদপুরের শ্যামাপল্লী এলাকায় ভোটের কাজে রির্জাভে ছিলেন ভোটকর্মী বাবুলাল মুর্মু৷ তিনি কুশমণ্ডীর সরলা এফ পি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন৷ গতকাল সকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। রাতে ডিসিআরসি থেকে তিনি বাড়িতে ফিরে যান। এরপর আজ সকালে বাড়ির একটি ঘরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ পরিবারের দাবি, ভোটের ডিউটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি৷
এমনিতেই নিখোঁজ অর্ণবের সন্ধান চেয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছে ভোটকর্মীদের একটি সংগঠন৷ অর্ণব রায়ের নিখোঁজ রহস্য ঘিরে যখন ভোটকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, ঠিক তখন শিক্ষকের অস্বাভিক মৃত্যু ঘিরে তৈরি হয়েছে নয়া উত্তেজনা৷
ফিরিয়ে আনতে হবে নিখোঁজ নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়কে৷ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ফিরিয়ে না আনা হলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের৷ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ঐক্যমঞ্চের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নোডাল অফিসার অর্ণব রায়কে ফিরিয়ে আনতে না পারলে ২৫ এপ্রিল কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের দপ্তরে অভিযান হবে৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গত ১৪ মে ইটাহারে ভোট গ্রহণের কাজে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ৪৮ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার রায়গঞ্জের বাসিন্দা রাজকুমার রায়। পরদিন ১৫ মে সন্ধ্যায় রায়গঞ্জের সোনাডাঙা এলাকায় রেললাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। রাজকুমার রায়ের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলা৷ সিবিআই তদন্ত চেয়ে দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে৷ সেই মামলার সমাধান এখনও সময়নি৷
পাঁচদিন পরেও খোঁজ নেই নদীয়া জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়ের। তিনি ইভিএম ওসির দায়িত্বে ছিলেন। স্বামীর সন্ধান না পেয়ে উদ্বিগ্ন অর্ণববাবুর স্ত্রী৷ আসানসোল থেকে তাঁর বাবা হারাধন রায় ও মা সুলেখা রায় কৃষ্ণনগরে পৌঁছে গিয়েছেন৷ অনিশাদেবী সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, কেন স্বামী নিখোঁজ হলেন। প্রকৃত ঘটনা উঠে আসুক। আমার স্বামী অবসাদগ্রস্ত ছিলেন না।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে জেলা প্রশাসনের ওসি ইভিএম অর্ণব রায় নিখোঁজ। তাঁর দু’টি মোবাইল এখনও বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন তাঁর স্ত্রী অনিশা যশ। অনিশাদেবীও নদীয়া জেলাশাসকের দপ্তরে ডব্লিউবিসিএস অফিসার হিসেবে কর্মরত। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অনিশা যশ বলেন, ‘‘সবার সহযোগিতা পাচ্ছি ঠিকই? কিন্তু, পুলিশকেও আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত৷ তিন দিন ধরে পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরছি৷ অথচ, কেউ কিছুই বলতে পারছেন না৷ কোথায় গেলে, কীভাবে পাব আমার স্বামীর খোঁজ৷’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘তিন দিন হয়ে গেল, অথচ কেউ আমার স্বামীর খোঁজ দিতে পারল না৷ আমি চাই ও সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক৷ জেলা প্রশানের লোকজন সবরকম চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন৷ তবে, এখনও পর্যন্ত আমার স্বামীর কোনও খোঁজ পাইনি৷’’
তিনি আশাবাদী, ‘‘আমার স্বামী কোনও ভাবেই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত ছিলেন না৷ তার কারণ, আমি বৃহস্পতিবার স্বামীর অফিসে গিয়েছিলাম৷ সব ঠিকঠাক ছিল৷’’ কমিশনের তরফে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখানো হলেও তাঁর সাফ জবাব, ‘‘উনি আমার স্বামী৷ সেদিন ওর সঙ্গে ছ’বার কথা হয়েছিল৷ কিন্তু, হঠাৎ যে কী হল…৷’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমি করজোড়ে প্রার্থনা করছি, সবাই মিলে চেষ্টা করুন, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷ ওর বাবা-মায়ের এক ছেলে৷ ওঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ ওঁদের কাছে অর্ণবকে ফিরেয়ে দিন প্লিজ৷ কেউ আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন৷’’