কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তলব করা হল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে তলব করেছে ইডি। ঘটনাচক্রে সেদিন বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা নয়াদিল্লিতে। আর তাতেই বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেখছে তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি বিরোধী জোটকে বিজেপি ভয় পেয়েছে বলেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেদিন অভিষেককে ডাকা হয়েছে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল বিরোধী জোটের তৃতীয় বৈঠক যেদিন মুম্বইতে হল সেদিন এই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
তিনি বলেছিলেন, যেভাবে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তাতে বিজেপি ভয় পেয়ে আগামী দিনে এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে দেশজুড়ে বিরোধী নেতা নেত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকবে, এবং অনেককে গ্রেফতারও করা হতে পারে। এরপরই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ডেকে পাঠাল অভিষেককে। তাই খাড়গে যা বলেছিলেন সেই রাস্তাতেই কার্যত হাঁটতে দেখা যাচ্ছে ইডিকে। এই আঁচ আগেই পেয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি?
তবে কি সত্যিই বিজেপির চাপে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে? এই চর্চা স্বাভাবিকভাবেই শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। এর আগে অভিষেককে ইডি শেষবার ডেকেছিল পঞ্চায়েত ভোটের আগে। কিন্তু সেই সময় পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা তুলে তিনি হাজিরা দিতে যাননি। যদিও পঞ্চায়েতের ফলাফল প্রকাশের পর অনেকটা সময় কেটে গেলেও তাঁকে আর তলব করা হয়নি। এরপর তিনি চোখের চিকিৎসা করাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। এবার আবার তাঁকে ডাকা হল। তবে তিনি বিরোধী জোটের বৈঠকের কথা বলে ফের হাজিরা এড়াবেন কিনা, নাকি বৈঠকে যোগ না দিয়ে ইডি দফতরে হাজিরা দিতে যাবেন, কোনওটাই স্পষ্ট হয়নি।
ঘটনা হল ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে কিছুদিন আগেই আদালতে ইডি জানায়, ওই সংস্থার সিইও পদে রয়েছেন অভিষেক। তাতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডির উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে বলেন, “তাহলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে পাঠানো হচ্ছে না কেন?” সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ইডিকে ১৪ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর অভিষেককে তলব করেছে ইডি। যা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, যেহেতু ১৪ সেপ্টেম্বর ইডির রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা কলকাতা হাইকোর্টে, তাই তার আগের দিন অভিষেককে ডেকে একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। যা প্রয়োজনে তুলে ধরা হতে পারে ওই রিপোর্টে। স্বাভাবিকভাবেই অভিষেককে তলব করার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। আগামী বুধবার বিষয়টি কোন দিকে গড়ায় তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল থাকবে রাজ্যবাসীর।