কলকাতা: খেলার মাঠ আর রাজনীতির ময়দান যে এক জিনিস নয় তা হাড়ে হাড়ে বুঝলেন ময়দানের দুঁদে মিডফিল্ডার মেহতাব হোসেন। খেলার মাঠে বিপক্ষের পা থেকে বল পাস করে ফরোয়ার্ডদের সহায়তা করা কিংবা ডিফেন্স লাইনকে জোর দেওয়া যে ঢের ঢের সহজ তা তিন বুঝে গেলেন ২৪ ঘণ্টা পেরনোর আগেই।
মঙ্গলবার বিজেপি সদর দফতরে গিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পতাকা নিয়ে দলে যোগ দেন তিনি। কিন্তু একদিন পেরোতেই তিনি জানান তিনি রাজনীতিতে থাকতে চান না। আর এর জন্য তিনি নিজের পরিবারের কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন পরিবার চায় না তাই তিনি রাজনীতিতে থাকবেন না। তবে তিনি জানিয়েছেন যাঁরা তাকে মেহতাব বানিয়েছিলেন তাদের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই তিনি রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
নিজের ফেসবুকের ওয়ালে মেহতার লিখেছেন “যে মানুষগুলো আমাকে মেহতাব করে তুলেছিল সেই মানুষগুলোর পাশে থাকার জন্যই আমার রাজনীতিতে প্রবেশ করার ইচ্ছা। মনে হয়েছিল, রাজনীতিতে এলে হয়তো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌছতে পারব। সারা পৃথিবীর এই খারাপ সময়ে সামর্থ্য অনুযায়ী বহু মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, তবুও যেন একা পেরে উঠছিলাম না। চারিদিকে ওই অসহায় মুখগুলো আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। চারপাশের সংখ্যাটা রোজ বাড়ছে। তাই হঠাৎ করেই রাজনীতিতে যোগ দিই আমি। তবে তারপর অদ্ভুত একটা উপলব্ধি হয়। যাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমার রাজনীতিতে আসা, তারাই আমাকে অনুরোধ করে, আমি যেন রাজনীতিতে সরাসরি না যাই। মানে, কোথাও গিয়ে তাদের ভাবাবেগ যেন আমাকে রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে চাইছে না। তাদের কাছে আমি এখনও ফুটবলার , মিডফিল্ড জেনারেল। ওদের ভালবাসাই আমাকে মেহতাব করে তুলেছিল। আমার পরিশ্রম আর স্বপ্নকে ওই মাঠে-ময়দানের মানুষগুলোই বাস্তবে পরিণত করেছিল। তাদের ওদের অনুরোধ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেল। মনে হল , আমি যাদের জন্য রাজনীতিতে এলাম তারাই আমাকে এই বেশে দেখতে চাইছে না। তাহলে কিসের জন্য আমি নিজের সত্ত্বাটা বদলাতে চাইছি? কিসের জন্য নিজেকে এক লহমায় আলাদা করতে চাইলাম? তাই অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম, রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেব। মাঝেমধ্যে , বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থকে ত্যাগ করতে হয়। আমিও তাই করতে চাই। নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের থেকে আমার কাছে ওই মানুষগুলোর ভালবাসা অনেক বেশি দামী, অনেক বেশি প্রিয়। ওই উন্মুক্ত সবুজ মাঠই আমার জায়গা , ওই গ্যালারির গগনভেদী “মেহতাব-মেহতাব” চিৎকারই আমার পছন্দের শ্লোগান। সেই শ্লোগানে অন্যকিছু মিশুক তা আমি চাই না। আমি চাইনা আমার ভালবাসার ও খুব কাছের লোকগুলো এইভাবে দুরে সরে যাক। ওদের জন্যই তো আমার যাবতীয় লড়াই , ওরাই যখন চাইছে না তখন নিজেকে 'রাজনীতিবিদ' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যর্থ চেষ্টা না করাই ভাল। আমি চাই না আমার জীবনটা বদলে যাক। আমার পরিবার মৌমিতা, জিদান, জাভি কেউই সমর্থন করেনি আমার আকস্মিকতা। ঠিক যেভাবে সাধারণ মানুষ কষ্ট পেয়েছে , সেভাবে ওরাও পেয়েছে। সকলকে নিয়েই তো আমার পরিবার। পরিবারের মুখগুলো কষ্ট পেলে আমিও ভেঙে করি, এটাই স্বাভাবিক- এটাই জীবনের নিয়ম। আমার কাছে অন্য কোনও কিছুর থেকে ওই 'মিডফিল্ড জেনারেল ' নামটা অনেক বেশি প্রিয় , অনেক বেশি আপন। কারোর প্রতি কোনও ঘৃণা নেই , রাগ নেই। বাইরের কেউ এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্যও করছে না। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতেই সরে যাচ্ছি এই রাজনীতির ময়দান থেকে। যেভাবে মানুষের পাশে থেকেছি সেভাবে ভবিষ্যতেও থাকব। আজ থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমি যুক্ত নই। আমার এই সিদ্ধান্তের জন্য আমার সকল শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’’
২১ বছর মিডফিল্ডে দাপিয়ে খেলে ২০১৯ সালে খেলা ছাড়েন মেহতাব। একমাত্র বাঙালী খেলোয়াড় যিনি সাতবার লিগজয়ী দলের সদস্য। মাঠই যে তার নিজের জায়গা এবং সেখানে যে তিনি সবচেয়ে বেসী স্বচ্ছন্দ আর কোথাও নয় তা বুঝে নিজেকে সরিয়ে নিলেন মিডফিল্ডার জেনারেল। তবে রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বিকেল ডট কমকে জানিয়েছেন, ‘‘তৃণমূলের চাপের মুখে পড়ে বিজেপিতে নাম লেখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দল ছাড়ার ঘোষণা করেছে মেহতাব৷’’