সংসারের হাল ধরতে বই-খাতা ফেলে চায়ের দোকানে ‘কন্যাশ্রী’ টুম্পা

সংসারের হাল ধরতে বই-খাতা ফেলে চায়ের দোকানে ‘কন্যাশ্রী’ টুম্পা

কলকাতা: শনিবার রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে কন্যাশ্রী দিবস৷ ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে রুখে, তাঁরা যাতে পড়াশোনা করে স্বনির্ভর হতে পারে সেই উদ্দেশেই এই প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু অভাবের সংসার টানতে বই খাতা ছেড়ে চায়ের দোকানে হাল ধরেছে এমনই এক ‘কন্যাশ্রী’ টুম্পা বর্মন৷ সকাল হলেই ঠেলা গাড়ির তালা খুলে শুরু হয় তাঁর জীবন সংগ্রাম৷ কর্ম ক্ষমতা হারানো বাবার ওষুধ, পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার যোগানোর গুরুদায়িত্ব যে তাঁর কাঁধেই৷ 

আরও পড়ুন- মনোনয়ন জমা দিলে ঠ্যাং ভেঙে দেব! পঞ্চায়েত নিয়ে হুমকি তৃণমূলের

টুম্পা গড়বেতার উমাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী৷ কন্যাশ্রী (কে ১) পেয়েছে সে৷  করোনা পরিস্থিতিতে আপাতত বন্ধ স্কুল৷ তার মধ্যই পড়াশোনা চলছিল৷ কিন্তু মাসখানেক আগে একটা ঘটনা বই, খাতা, পেনের জগত থেকে টুম্পাকে এনে দাঁড়া করাল রাস্তায়৷ মাস খানেক আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে পক্ষাঘাত হয় তাঁর বাবা রবীন্দ্রনাথ বর্মনের৷ কর্মক্ষমতা হারান তিনি৷ চার জনের সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে টুম্পার কাঁধে৷ ভোর ছ’টা বাজতেই বোন ঝর্ণাকে নিয়ে ব্লক অফিসের পিছনে কুড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে টুম্পা৷ ব্লক অফিস থেকে কয়েকশো মিটার দূরে রয়েছে তাঁদের ঠেলাগাড়ির দোকান৷ শুরু হয় চা, ডিম টোস্ট বিক্রি৷ টুম্পা বলে, ‘সারা দিন চা, ডিম টোস্ট দিতে দিতেই দিন কেটে যায়৷ বোন অবশ্য সাহায্য করে৷ দুপুরে বোনকে দোকানে বসিয়েই বাড়ি থেকে স্নান খাওয়া সেরে আসি৷’ আর পড়াশোনা? উত্তরে টুম্পা বলে, ‘বাড়ি ফিরতে ৮টা বেজে যায়৷ এর পর কি আর পড়া হয়? চোখে তখন ঘুম জুড়িয়ে আসে৷’ 

টুম্পারা তিন বোন৷ বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ টুম্পার মা লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘বড় মেয়ের বিয়ের পর মেজো ও ছোট মেয়ের পড়াশোনার জন্য ওঁদের বাবা অনেক কষ্ট করেছেন৷ কিন্তু তিনিই এখন শয্যাশায়ী৷ অভাবের তাড়নায় মেয়ে দুটোর পড়ার খরচ জোগাতে পারিনি৷’ রবীন্দ্রনাথ বাবু আসলে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা৷ ৩০ বছর আগে তিনি গড়বেতায় চলে আসেন৷ এর আগে সবজির ব্যবসা করতেন৷ কিন্তু লকডাউনে সে ব্যবসাও লাটে ওঠে৷ পরে সংসার বাঁচাতে খোলেন এই ঠেলা গাড়ি৷ যার দায়িত্ব এখন টুম্পার হাতে৷ 

আরও পড়ুন- ফের নাবালিকা ধর্ষণ মালদহে, অভিযুক্তকে গণধোলাই গ্রামবাসীদের, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-বৃষ্টি

টুম্পাদের এই অসহায় অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে গড়বেতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা৷ টুম্পার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উষ্ণা সানগিরি বলেন, ‘‘দুঃস্থ ছাত্রীদের পাশে সর্বদাই আমরা রয়েছি৷ টুম্পার সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে পাশে থাকতে প্রস্তত আছি।’’ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন গড়বেতা ১-এর বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজাও।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × four =