ঐতিহ্য মেনে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পাঁচ দিনের রাস উৎসব

ঐতিহ্য মেনে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পাঁচ দিনের রাস উৎসব

বাঁকুড়া: প্রাচীন ঐতিহ্য আর পরম্পরা মেনে ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পাঁচ দিনের রাস উৎসব শুরু হল। এখানকার মল্ল রাজাদের আমলে বিষ্ণুপুরে কৃষ্ণ প্রেমের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তৎকালীন রাজারা একের পর এক কৃষ্ণ মন্দির তৈরি করার পাশাপাশি তৈরি করেছিলেন পিরামিডাকৃতি বিশালাকার রাস মঞ্চ।

মল্লরাজাদের আমলের রাস উৎসবের ধারাবাহিকতা আজও রক্ষা করে চলেছে বিষ্ণুপুর । এদিন বিষ্ণুপুর রাজ পরিবার থেকে আসা সতেরো জোড়া সহ মোট ছত্রিশ জোড়া রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহকে বিশেষ সাজে সাজিয়ে রাধামদন গোপাল জিউয়ের মন্দিরে আনা হয়। পাঁচ দিন ধরে এখানে বিশেষ পুজাপাঠ ও সব কটি বিগ্রহকে আলাদা আলাদাভাবে সন্ধ্যারতি করা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে রাণী চূড়ামনি দেবী বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জে মদনগোপাল মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

আর ঠিক তখন থেকেই এখানে রাস উৎসবের সূচনা। আরও পরে ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা বীর হাম্বির পিরামিডাকৃতি রাস মঞ্চ তৈরি করেন। যদিও এখানে নির্দিষ্ট কোন দেবমূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বলে জানা যায়নি। তবে এখানে ধূমধাম করে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাধাকৃষ্ণ মূর্তি এনে মহাধূমধামে রাস উৎসব পালন করা হত, এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। শোনা যায়, আরও পরে কোন এক সময় ওই রাস মঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন বজ্রপাতের ঘটনা ঘটায় রাস মঞ্চে রাস উৎসব পালন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ বিষ্ণুপুরে মল্লরাজ বীর হাম্বিরের আমল থেকে রাস উৎসবের সূচনা হয়। বর্তমানেও সেই প্রাচীন ঐতিহ্য আর পরম্পরা মেনে সমস্ত বিগ্রহ রাজবাড়ি থেকে সম্মাণপূর্বক মাধবগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। উৎসব শেষে সমস্ত বিগ্রহ আবারও রাজবাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। রাস উৎসব উপলক্ষ্যে ফি বছর প্রচুর দর্শনার্থীরা ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ বলে খ্যাত বিষ্ণুপুরে হাজির হন। মেলা বসে। আলোর রোশনাই, পাঁচ দিন ধরে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর রাস মেলাকে কেন্দ্র উৎসবে মাতোয়ারা থাকে এক সময়ের মল্ল রাজাদের প্রাচীন এই রাজধানী। কিন্তু চলতি করোনা পরিস্থিতি এসব আয়োজনে বাধ সেধেছে। বন্ধ মেলা, জনসমাগমও যথাসম্ভব না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *