নিজস্ব প্রতিনিধি: ডাকাত ধরতে পুলিশ সঙ্গী করল এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে! যে বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আর অভিযানে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। ঘটনাস্থল দক্ষিণেশ্বর। সেখানেই হয়েছে শুটআউট। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক সিভিক ভলান্টিয়ার। উত্তর চব্বিশ পরগনার রহড়ায় কিছুদিন আগে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের একটি দল শুক্রবার পৌঁছে যায় দক্ষিণেশ্বরে। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। আর দুষ্কৃতীদের গুলি ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের পায়ে লাগে। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একটি আগ্নেয়াস্ত্র সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণেশ্বর থানার আদ্যাপীঠ এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় এলাকা জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম রেজাউল হক ওরফে ইমরান। তাঁর বাঁ পায়ে গুলি লেগেছে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, “সেভেন এম এম পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল। গুলিটি আমাদের কর্মীর পায়ে লাগে। তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল সেটি এবং তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে।” আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন, কেন ডাকাত ধরতে যাওয়ার সময় ঢাল-তরোয়াল বিহীন সিভিক ভলান্টিয়ারকে সঙ্গে নেওয়া হল? এর উত্তর দেবেন কে? স্বাভাবিকভাবেই ঘটনাটি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাব্যক্তিরা।
উল্লেখ্য রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কয়েক বছর পরে রাজ্য জুড়ে ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার’ হিসেবে বিপুল সংখ্যক যুবককে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই তাঁদের কাজের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন পুলিশ শব্দটি বাদ দিয়ে তাঁদের শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কি কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়ে থাকে তাঁদের? রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, চুক্তির ভিত্তিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করেছিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। ছয় মাস অন্তর তাঁদের চুক্তি রিনিউ হওয়ার কথা। তাঁদের দায়িত্ব মূলত যান শাসন ও বিভিন্ন মেলা পার্বণে ভিড় সামলানো।
মূলত পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা কাজ করে থাকেন। কর্মরত অবস্থায় তাঁদের হাতে পুলিশের মতো পিস্তল বা রাইফেল থাকে না। একটা সময় স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইএসআই-সহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনার দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে কাজ করার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ারও দাবি তোলেন তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ তাঁদের কোনও দাবিই নাকি মানা হয়নি। তাই খাতায় কলমে সিভিক ভলান্টিয়ারদের যে কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে সেখানে তাঁদের একজনকে নিয়ে কেন ডাকাতির ঘটনার কিনারা করতে গেল পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের সঙ্গে গিয়ে কেন সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডাকাতের গুলি খেয়ে হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে হবে, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। যা অস্বস্তিতে ফেলেছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তা ব্যক্তিদের। তবে কি পুলিশের যা কাজ তার অনেক কিছুই সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে করিয়ে নেওয়া হয়? দক্ষিণেশ্বরের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে এই চর্চা শুরু হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরও কি দায় এড়াতে পারে? সে প্রশ্নও তুলছে ওয়াকিবহাল মহল। সূত্রের খবর, বহু ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে অনেক কাজ করানো হয় যা তাঁদের করার কথা নয়। তবে কি দক্ষিণেশ্বরে ডাকাতির ঘটনার কিনারা করতে যাওয়ার সময় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মীর অভাব ছিল? কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? এমন প্রশ্ন ওঠাই তো স্বাভাবিক। সবমিলিয়ে দক্ষিণেশ্বরের ঘটনায় উঠে গেল বহু প্রশ্ন।