মালদা: রাজনীতির জন্য সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটাল ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের প্রাক্তন কাউন্সিলার পরিতোষ চৌধুরির ওরফে (সেভেন)। দলনেত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর অবশেষে নিজের স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে চলেছেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পরিতোষবাবুর স্ত্রী নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। আর সেই কারণে তিনি তার স্ত্রী কাকলি চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিভোর্স ফাইল করতে চলেছেন।
সাংবাদিকদের সামনে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ করার কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের প্রাক্তন কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী ওরফে সেভেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব যাকে ভাল মনে করেছেন তিনি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু আমার স্ত্রী এবার নির্দলে দাঁড়িয়েছেন। তার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি আমার বাড়ির দোতলায় থাকি। স্ত্রী নিচের তলায় একাই থাকেন। কাজেই আমি তৃণমূল দলকে ভালোবেসেই স্ত্রীকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী হয়েছে আমার স্ত্রী, এরকম কোনও বিষয় নেই। আমি তৃণমূলে আছি এবং থাকব।’’
ইংরেজবাজার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো নির্বাচনকে ঘিরে প্রথম থেকেই নানান বিতর্ক ঘুরপাক খাচ্ছিল। এই ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল দলের এবারের প্রার্থী হয়েছেন মনিষা সাহা কুন্ডু। গতবারের বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী পরিতোষ চৌধুরী দাঁড়াতে পারেন নি । কারণ এই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। কিন্তু পরিতোষবাবুর স্ত্রী কাকলি চৌধুরী তৃনমূলের প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও অদ্ভুতভাবে তা হয় নি। এরপরই কাকলি চৌধুরীর নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা। আর সেই প্রশ্নের জবাব পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর পরিতোষ চৌধুরী।
পরিতোষবাবু বলেন, ‘‘রাজনীতিতে আমি তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আদর্শে মেনেই এতদিন চলেছি। আমি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম । আমার স্ত্রীও একসময় এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। কিন্তু এবারে এই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন আমার স্ত্রী নির্দলে দাঁড়ানোর পিছনে আমি নাকি দায়ী। এটা সম্পূর্ণ ভুল। দিদির জন্য আমি পরিবার ত্যাগ করেছি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই । তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা করতে চলেছি। কাজেই এখানে যারা অভিযোগ করেছেন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। রাজনীতির জন্য আমি পরিবার ছাড়তেও রাজি আছি। আপাতত আমার দুই ছেলে আমার সঙ্গে থাকেন। স্ত্রী আলাদা থাকে। জেলা নেতৃত্ব আমাকে স্ত্রী নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর ব্যাপারে জানতে চেয়েছিল। তাকে আমার এই বক্তব্য পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি৷’’
অন্যদিকে পরিতোষ বাবুর স্ত্রী তথা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী কাকলি চৌধুরী বলেন, রাজনীতির জন্য পরিবার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিমুখ হয়ে গিয়েছেন পরিতোষ চৌধুরী। এই ওয়ার্ডে তৃনমূলের একটি সংস্থা থেকে প্রথম তালিকায় আমার নাম প্রকাশ করেছিল। পরবর্তীতে আমার নাম বাদ পড়ে যায়। তাকে প্রার্থী করা হয়েছে। মানুষ তাকে চিনে না। আমি এক সময় নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলাম। তবুও এবারে প্রার্থী হতে পারেনি। কিন্ত আমার স্বামী তৃনমূল ছাড়া কিছুই বোঝেন না। পরিবার নিয়ে কোনও ভাবনা নেই তার। এলাকার মানুষ আমাকে বলেছে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াবার জন্য। আর সেই মানুষের দাবি মেনে অনুরোধ মেনেই আমি নির্দল প্রার্থী হয়েছি। আমার সাথে আমার তৃণমূল স্বামীর কোনও সম্পর্ক নেই। তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা রুজু করতে চলেছি। কাজেই আমি আমার মতো রাজনৈতিক করব। উনি কি করবেন সেটা তার ব্যাপার।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী জানিয়েছেন, মালদায় নির্বাচনী প্রচার এসে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন যারা দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন। তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে তাদের বহিষ্কার করা হবে। সেই মতো আমরা পুরো বিষয়টি দেখছি । ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিষয়টি নিয়েও এই মুহূর্তে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারব না। দু-একদিনের মধ্যে সমস্ত বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।