বাঁকুড়া: অল্পেতে খুশী হবে/দামোদর শেঠ কি!/মুড়কির মোয়া চাই,/চাই ভাজা ভেটকি। রবি ঠাকুরে বর্ণনায় খাদ্যরসিক দামোদর শেঠের রকমারি খাবারের আয়োজন সবারই প্রায় জানা। সে একেবারে যে সে আয়োজন নয়। বিভিন্ন জায়গার নামীদামী খাবারের লিস্ট ছাড়া মন বা পেট কিছুই ভরত না দামোদরের। আজ আমরা জানব দামোদরের মতই এক খাদ্যরসিকের গল্প। তবে রবি ঠাকুরের দামোদর শেঠের মতো মুড়কির মোয়া, ভাজা ভেটকি, ঘি, বোয়ালের পেট, কাঁকড়ার ডিম ইত্যাদি কিছুই চাইনা এই মানুষটির। আর দামোদরের মত কলেবর নয় কিংবা ওজনও তিন মণ নয় তাঁর। দোহারা চেহারার এই মানুষটি একটা সবজি, এক টুকরো মাছ হলেই অনায়াসে খেয়ে ফেলতে পারেন প্রায় দু’কেজি চালের ভাত। তৃপ্তি করে খান তিনি আর তাঁকে খাইয়ে এবং খেতে দেখে খুশি হোটেলমালিক থেকে তাঁর বন্ধু সবাই।
হিড়বাঁধের পড়্যারডাঙ্গা গ্রামের দুলালচন্দ্র মুর্ম্মু। পেশায় খাতড়া মহকুমা আদালতের মুহুরী। প্রতিদিন বাড়ি থেকে ১৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাওয়া আসা দুলালবাবুর। কাজের চাপ তো থাকেই, তবেই সেই সঙ্গে খাওয়া দাওয়া তো আর বন্ধ রাখা যায় না। কাজের ফাঁকেই এস.ডি.ও মোড়ের একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খান তিনি। হোটেলে মাত্র ৫০ টাকাতেই পেট ভর্তি খাবার মেলে। কিন্তু দুলালবাবু একাই এক কেজির বেশী চালের ভাত খান। সঙ্গে থাকে এক টুকরো মাছ এবং পরিমাণমত সবজি। দুপুরের খাবার পেটভরে খান তিনি। যদিও বাড়িতে একটু বেশিই খান দুলালবাবু। মোটামুটি ২ কেজি চালের ভাত বাড়িতে খেলেও হোটেলের মিল সিস্টেম দেখে ১ কেজি চালের ভাতেই কাজ সারেন তিনি।
মাত্র ৫০ টাকায় এক কেজি চালের ভাত খান দুলালবাবু। তাঁকে খাইয়ে রোজ প্রায় ৪০ টাকার মতো লোকসান হলেও তাোতে দুঃখ নেই হোটেল মালিকের। তিনি বলেন, এখন মানুষ খুব বেশী খেতেই চায়না। উনি খান। লোকসান হলেও ওঁকে খাইয়ে আনন্দ পান।
রোজ এত খাওয়া কিন্তু মেদহীন চেহারার রহস্য কি? প্রশ্নের উত্তরে দুলাল বাবু বলেন, শারীরিক পরিশ্রমই আসল চাবিকাঠি। রোজ ১৬ কিলোমিটার করে আসা যাওয়ায় সাইক্লিংয়ের ধকল। সেইসঙ্গে বাড়ির ক্ষেতে কাজ এবং ক্রমাগত পরিশ্রমই দুলালবাুকে ফিট রাখে। কোন সমস্যা হয়না তাঁর।
দুলালচন্দ্র মুর্ম্মুর সহকর্মীরাও তাঁর এই অভিনব খাদ্।প্রেমের সাক্ষী। খাতড়া কোর্টের আইনজীবি সাগেন মুর্ম্মু বলেন, ওনার খাওয়ার তাঁরা দীর্ঘদিনের সাক্ষী। তিনি জানান সম্প্রতি একটি বিয়ে বাড়িতে ৩০ টি নান, ১ কেজি খাসির মাংস, ৫০-৬০ টির মতো রসগোল্লা খেয়েছেন দুলালবাবু।
আজকের দুনিয়া খাদ্যরসিকের সংজ্ঞা বদলেছে। পরিমাণে অনেক নয়, ধরণে অনেক খবার যারা খান তাঁদেরই এখন খাদ্যরসিক বা ফুডি নামে ডাকা। আগের দিনে বাজি লাগিয়ে খাবার খাওয়া সেই মানুষগুলি আজ বিলুপ্ত। মাঝেমধ্যে দুলালচন্দ্র মুর্মুর মত এক দুজন সামনে আসেন। যাদের কাছে খাওয়াটাই আসল, কী খাচ্ছেন সেটা নয়। তাঁরা ভালবেসে খান, খেতে ভালবাসেন। দুলালবাবু তো প্রশংসার দাবিদার বটেই তবে তাঁর আশেপাশের মানুষগুলি যারা তাকে খেতে দেখতে ভালবাসেন তাঁরা কিন্তু কম প্রশংসার নন।