কলকাতা: আন্দামান সাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ এবার বাংলার বুকে দাগ কাটতে পারবে না বলে আগেই আশ্বস্ত করেছে হাওয়া অফিস৷ যাবতীয় দুর্যোগ সইতে হবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকেই৷ এর পর মুখ ঘুরিয়ে ঘূর্ণিঝড় রওনা দেবে মায়ানমারের অভিমুখে৷ পশ্চিমবঙ্গের উপর তাঁর কোনও প্রভাব পড়বে না৷ হাওয়া অফিস অভয় দিলেও অশনি বাংলার জন্য অশনি সঙ্কেত বয়ে আনবে কি না তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে৷
আরও পড়ুন- রাজ্যের বিরুদ্ধে ভুরিভুরি অভিযোগ আদালতে, রামপুরহাট কাণ্ডের শুনানিতে হইহই
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেন অশনি-সঙ্কেত, সেটা বুঝতে হলে দু’টি রিপোর্ট মাথায় রাখতে হবে৷ একটি রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এবং ভারত সরকারের ক্লাইমেট হ্যাজার্ড অ্যাটলাস৷ ওই দু’টি রিপোর্টেই দাবি করা হয়েছে যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ক্রমেই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়বে৷ ফলে তা বিপদ বার্তা বয়ে আনবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব উপকূলের জন্যে।
আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় তৈরির ক্ষেত্রে যে-ক’টি শর্ত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল সমুদ্র জলের উষ্ণতা৷ সাধারণত সমুদ্রের জলতলের উষ্ণতা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই তা ঘূর্ণিঝড় তৈরির পরিস্থিতি তৈরি করে। বিষ্ণ উষ্ণায়নের জেরে মার্চ মাসেই সাগরজলের উষ্ণতা যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তা দেখে আবহবিদদের আশঙ্কা, ভরা গ্রীষ্মে তা আরও বেড়ে যাবে৷ যা যথেষ্ঠ উৎকণ্ঠার বিষয়৷ আবহবিদরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক দশকের পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, বঙ্গোপাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির গড় হার অনেকটাই বেশি। চলতি বছর মার্চ মাসে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তো বটেই।
গত এক দশকে বঙ্গোপসাগরে যতগুলি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানা বেঁধেছে, তার নেপথ্য কারণ হিসাবে সাগরজলের উষ্ণতাকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। গত তিন বছরে ভরা গ্রীষ্মেই তিনটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে ২০২০ সালের আমপান এবং ২০২১ সালে ইয়াসের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়েছিল দক্ষিণবঙ্গই৷
কিন্তু জানেন কি ঘূর্ণিঝড় কোন দিকে বয়ে যাবে তার পিছনেও কয়েকটি কারণ লুকিয়ে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখের অন্যতম কারণ হল বায়ুমণ্ডলের উপরি স্তরের বায়ুপ্রবাহের গতি ও তার অভিমুখ৷ আবহবিদরা জানাচ্ছেন এপ্রিল-মে মাসে গাঙ্গেয় বঙ্গ-সহ পূর্ব উপকূলের বায়ুপ্রবাহের গতিবিধির ভিত্তিতে বাংলায় বা সংলগ্ন অঞ্চলেই আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়। আবার বর্ষার পর ঠান্ডা, শুকনো বায়ুর প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে পড়ে৷ এমনটা বহুবার দেখা গিয়েছে৷ ফলে এপ্রিল-মে মাসে কোনও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে বাংলার উপর তার আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি৷
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথায়, ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার ক্ষেত্রে মূলত দু’টি পর্ব আছে। একটি প্রাক্-বর্ষা এবং অপরটি বর্ষা-পরবর্তী সময়। সূর্য যখন নিরক্ষরেখার উপরে অবস্থান করে, তখন নিরক্ষীয় অঞ্চলে সাগরজলের তাপমাত্রা বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা৷ অশনি সঙ্কেত বুঝতে গেলে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>