কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, সুন্দরবন অঞ্চলে বছরে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ করা হবে। সেই মতো উপকূলবর্তী ব্লকগুলিতে মূলত একশো দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ নার্সারি গড়ে তোলার কাজ শুরু করা হয়। পাখিরালয় ফেরি ঘাটের পশ্চিমে ৭০০ থেকে ৮০০ মিটার প্রসারিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ২০২০ সালের বৃক্ষরোপণ প্রকল্পেরই অংশ৷ যা চলতি বছরের মার্চ মাসে গোমোর নদীর জলে ভেসে গিয়েছে৷
আরও পড়ুন- ক্ষমতায় এলে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে DA’, মমতার সরকারকে বিঁধে ‘প্রতিশ্রুতি’ শুভেন্দুর!
এর ঠিক পাশেই ১২০০-১৩০০ মিটার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে আরও একটি ম্যানগ্রোভ বন৷ এটিও সরকারি প্রকল্পের অংশ৷ এই বনটি অবশ্য ঢেউ-এর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে৷ কিন্তু, গবাদি পশুর আক্রমণে সবটা রক্ষা হয়নি৷ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে পশুচারণ রুখতে বানটিকে লাইলন জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে৷ এতে বেশকিছু গাছ মাথাচাড়া দিয়েও উঠেছে৷ স্থানীয় বাসিন্দা যোগেশ মন্ডল বলেন, ‘‘অনেক গাছ এখনও বেঁচে আছে৷ কিন্তু গবাদি পশুর চারণ বন্ধ করা না গেলে এই গাছ বাঁচানো সম্ভব নয়৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘নাইলন জালের তাজা ব্যারিকেড বসাতে হবে৷ না হলে বেশিদিন গাছগুলিকে বাঁচানো যাবে না৷’’
২০২০ সালে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অঞ্চল৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (MGNREGA)-এর অধীনে পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগানোর একটি মেগা প্ল্যান্টেশন প্রকল্প ঘোষণা করেন৷ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর চরে ম্যানগ্রোভ বসানোও হয়। কিন্তু এ বছর সেই কাজ প্রায় বন্ধ। একশো দিনের প্রকল্পের টাকার জোগান বন্ধ থাকায় নার্সারির পরিচর্যাও বন্ধ।
যদিও পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ঘনত্ব ১,০৩৮ বর্গ কিলোমিটার থেকে কমে ৯৯৪ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে৷ গত ১৫ বছরে মাঝারি ঘনত্বের ম্যানগ্রোভ অরণ্যও বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে৷ ৮৮১ বর্গ কিমি থেকে কমে তা ৬৯২ বর্গ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। তবে উন্মুক্ত বনাঞ্চল ২৩৩ বর্গ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৪২৮ বর্গ কিমি হয়েছে।
২০০৪ সালে সুনামির পর ঘূর্ণিঝড়, বৃষ্টি এবং ক্ষয় থেকে উপকূলবর্তী এলাকাকে রক্ষার জন্য ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপন বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় বিষয় হয়ে ওঠে। করে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর সুন্দরবন অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপনের জনপ্রিয়তা বিশেষ ভাবে বৃদ্ধি পায়৷
২০০৪ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় এলাকায় লক্ষ লক্ষ ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করা হয়েছে৷ যার মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ হল লবণ-সহনশীল গাছ, যাকে হ্যালোফাইটও বলা হয় এবং কঠোর উপকূলীয় পরিস্থিতিতে বসবাসের জন্য অভিযোজিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও গুরুতর হয়ে উঠলে, ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমগুলি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং চরম আবহাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো পরিবর্তনগুলির জন্য আরও স্থিতিস্থাপক হতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হয়৷
তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওশানোগ্রাফিক স্টাডিজের অধ্যাপক সুগত হাজরার কথা, যে সমস্ত অঞ্চলে তরঙ্গের বেগ বেশি এবং ক্ষয় দ্রুত হয়, সেখানে ম্যানগ্রোভের চারাকে ঢেউ-এর হাত থেকে রক্ষা না গেলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচানো সম্ভব নয়৷ সেইসঙ্গে গবাদি পশুর হাত থেকে ম্যানগ্রোভচারা রক্ষা করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>