নিজস্ব প্রতিনিধি: বর্তমান উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। নবান্নের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যাকে বলে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক ছিল ধনকড় এবং তৃণমূল সরকারের মধ্যে। তৃণমূল নেতৃত্ব তখন বারবার অভিযোগ করে বলেছেন বিজেপির ইশারাতেই চলছেন ধনকড়। পাল্টা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বেলাগাম সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল ধনকড়। তাই উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ের পর জগদীপ ধনকড়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করে তৃণমূল। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে এবার সরে আসছে তৃণমূল। ৬ সেপ্টেম্বর তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করতে চলেছেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল সাংসদ ও রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দু শেখর রায়ের নেতৃত্বে দোলা সেন, শান্তনু সেন ও সুস্মিতা দেব, এই চার সদস্যের বিশেষ প্রতিনিধি দল ধনকড়ের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁর দিল্লির বাসভবনে গিয়ে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক বলে দাবি করা হলেও এতদিন পর ধনকড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সাংসদদের দেখা করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজধানীর অন্দরে।
আরও পড়ুন- স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে টাকা অমিল, পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার? হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা চিকিৎসকের
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল তৃণমূল। গত ১১ আগস্ট ধনকড়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও থাকেনি তৃণমূল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন আমন্ত্রণও পেলেও হাজির ছিলেন না একজনও। কারণ হিসেবে রাজনীতিবিদদের ধারণা বাংলার রাজ্যপাল থাকাকালীন জাগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে তৃণমূলের চরম বিরোধ ছিল। আবার সেই ধনকড়ের বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের প্রার্থীকে সমর্থন না জানিয়ে ভোটদান থেকে বিরত ছিল তৃণমূল। এই দুই কারণে ধনকড়ের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল তৃণমূল। শুধু তা-ই নয়, শপথগ্রহণের পর বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও, তা এড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূল। অবশেষে জগদীপ ধনকড়ের মুখোমুখি হচ্ছেন তৃণমূল সাংসদরা।
জগদীপ ধনকড় দেশের উপরাষ্ট্রপতি, একটি বিশেষ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত৷ সেই পদের প্রতি সম্মান দেখিয়েই তৃণমূল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলের দাবি। তবে বিজেপি বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূল যে কতটা স্বার্থপর দল তা এই সিদ্ধান্তেই প্রমাণিত। সেই সঙ্গে বিজেপির প্রশ্ন, ধনকড় উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেও তো তৃণমূল সৌজন্য দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেনি। তখন কি তাহলে সৌজন্যের বিষয়টি তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন? উল্লেখ্য নিয়ম অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদে আসীন হন। রাজ্যসভার অধিবেশন কক্ষ তিনিই পরিচালনা করেন। তাই আগামীদিনে ধনকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ না হলে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদরা অসুবিধায় পড়বেন, এটা ভেবেই কি তাহলে সম্পর্ক মেরামতির চেষ্টা করছে জোড়াফুল শিবির? এই প্রশ্ন অবধারিত ভাবে উঠছে।
আরও পড়ুন- চাকরির নামে প্রতারণার করে ফেরার পার্থ-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা! টাকা ফেরাচ্ছেন দলেরই এক উপপ্রধান
এর পাশাপাশি রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মত, পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন রাজ্যপাল থাকার সুবাদে রাজ্য প্রশাসনের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ধনকড়। তাই আগামী দিনে কোনও ভাবে যাতে অসুবিধায় পড়তে না হয় সেই জন্য এখন থেকে ধনকড়ের সঙ্গে তৃণমূল বিবাদ মিটিয়ে নিতে চাইছে বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে নিছক সৌজন্যের খাতিরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন দলীয় সাংসদরা। সবমিলিয়ে ধনকড়ের সঙ্গে তৃণমূল সাংসদদের সাক্ষাৎ পর্ব নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে।