হাওড়া: হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির কথা জানে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময়কার ঘড়ি। হ্যাঁ, সময় তো ঠিকঠাক জানান দেয়। কিন্তু তার থেকেও বেশি জানান দেয় মানুষের অবস্থান। ল্যান্ডমার্ক হিসেবে কাজ করে। হাওড়ার বড় ঘড়ির তলায় দাঁড়ালে একবার তো শোনা যাবেই, ‘আমি বড় ঘড়ির তলায় আছি। চলে আয়।’
দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীনতার পরে নানা উত্থান পতনের সাক্ষী এই বড় ঘড়ি। ভারতে স্টিম ইঞ্জিন যখন এল। সারাদেশে এই স্টিম ইঞ্জিন যখন একছত্র রাজত্ব করছে, সেই সময় বড় ঘড়ির জন্ম হয়েছিল। ১৯২৬ সালে এই ঘড়ির জন্ম হয়। ঘড়িটির মুখ রয়েছে হাওড়া স্টেশনগুলোর দিকে। এই ঘড়িটির দুটো দিকে মুখ রয়েছে। একদিকে ১ থেকে ৮ নম্বর স্টেশনের দিকে ঘোরানো রয়েছে। অন্যদিকের মুখটা ৯ থেকে ১৫ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত ঘোরানো রয়েছে। হাওড়ার স্টেশন ম্যানেজারের অফিসের পাশে দেওয়ালে এই ঘড়ি রয়েছে।
এই ঘড়িটি লন্ডনের জেন্টস কোম্পানি এই ঘড়িটি প্রস্তুত করে। জানা গিয়েছে, আগে ঘড়িটিতে নিয়মিত দম দিতে হত। দূরনিয়ন্ত্রক পালসার যন্ত্রের সাহায্যে এর দম দেওয়া হতো। কিন্তু ১৯৭৫ সালে ঘড়িটি মেকানিক্যাল থেকে ইলেক্ট্র মেকানিক্যালে রূপান্তরিত করা হয়। রিচার্জেবল ব্যাটারি ঘড়িটির জন্য ব্যবহার করা হয়। এখন আর চাবি ঘুরিয়ে দম দিতে হয় না।
প্রায় ৯৬ বছর ধরে ঘড়িটি সময় দিয়ে চলেছে। কোনও যাত্রী এখনও এই ঘড়ি দেখে সময় মিলিয়ে নেয়। এখন শুধু এই ঘড়ি শুধু সময় দেয় না। বাঙালিদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে। আবেগের জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বার বার উঠে এসেছেন এই ঘড়ির কথা। শক্তি চট্টোপাধ্যায় থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রায়শই ডুব দিব দিয়েছেন হাওড়ার স্টেশনের বড় ঘড়ির নস্টালজিয়ার।