কলকাতা: ময়নাগুড়ি ধর্ষণকাণ্ডে ফের পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল গুরুতর অভিযোগ। এবার পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ জোর করে সাক্ষীদের ভয় দেখাচ্ছে। এমনকি সাক্ষীদের সই নকল করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বুধ সকালে পুলিশের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ জানিয়ে ফের তিনি আদালতের কাছে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন বলে খবর।
অন্যদিকে জানা যাচ্ছে, এদিনই ময়নাগুড়ি নির্যাতিতার বাবার সাথে সরাসরি কথা বলতে চান প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। সঙ্গে সঙ্গে মৃতার বাবাকে তাঁর চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হলে ময়নাগুড়ি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নির্যাতিতার বাবার সাথে প্রায় ১৫ মিনিট কথা বলেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশক ও বিচারপতি রাজর্ষি ভারদ্বাজ।
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় নির্যাতিতার বাবা রাজ্য পুলিশের ওপরই প্রথমে আস্থা রেখেছিলেন। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে সশরীরে তিনি হাজির হয়েছিলেন৷ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের ভরা এজলাসে তিনি জানিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ওপরই তাঁর আস্থা রয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে নির্যাতিতার বোন সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। পরিবারের দুই সদস্যের দুরকম মন্তব্য ঘিরে তৈরি হচ্ছিল রহস্য। বিষয়টি নিয়ে যাতে আর ধোঁয়াশার সৃষ্টি না হয় তার জন্য একটি জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী সুস্মিতা দত্ত। সেই জনস্বার্থ মামলার শুনানিতেই তিনি আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন৷ বলেন সাক্ষীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এমনকি তাঁদের সই পর্যন্ত নকল করা হচ্ছে। এছাড়াও তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ এনেছেন। এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন, নির্যাতিতার বাবাকেও নাকি ভয় দেখিয়েছে পুলিশ।
যদিও এখনও নির্যাতিতার বাবা আইনজীবী মারফত আদালতে জানিয়েছেন, সিবিআই নয় রাজ্য পুলিশকে দিয়েই তদন্তের পক্ষে তিনি রয়েছেন। তবে নির্যাতিতার বোন দাবি করেছেন, সিবিআই তদন্ত করা হোক। তাঁর দিদির ধর্ষণকারীদের সঙ্গে যারা যারা যুক্ত রয়েছে তাঁদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। এক্ষেত্রে পরিবারের দুই সদস্যের দুই ধরণের মন্তব্যের কারণে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হলে মামলার শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব নির্যাতিতার বাবাকে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যান৷ সেখানেই তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। নির্যাতিতার বাবাকে প্রশ্ন করা হয়, কেন তাঁর এবং তাঁর আরেক মেয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছেন? কেন তিনি রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থার উপর আস্থা রাখছেন এবং কেনই বা তাঁর আরও এক কন্যা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপর আস্থা রাখতে চাইছেন? জানা যাচ্ছে, এই ব্যাপারে টানা ১৫ মিনিট প্রধান বিচারপতি সঙ্গে কথা বলার পর বাইরে বেরিয়ে আসেন নির্যাতিতার বাবা।
অন্যদিকে, কি কথা হয়েছে নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি? ‘খুব অল্প সময়ের জন্য কথা বলার সময় পেয়েছি। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম আপনাকে কেউ ভয় দেখিয়েছে কিনা। উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, না আমায় কেউ ভয় দেখায়নি।’ সেই সঙ্গে তিনি এও জানান, ‘মৃত্যুরকালীন জবানবন্দিতে নির্যাতিতা তাঁর বাবাকে জানান কে কারা এই ঘটনায় যুক্ত।সেই বয়ান অনুযায়ী নির্যাতিতার বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাসকদলের বেশ কয়েকজন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। এখনও পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে নির্যাতিতার বাবাকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের নিরাপত্তা অবশ্যই সুনিশ্চিত করবে রাজ্য সরকার।’
এর সঙ্গেই রাজ্যের তদন্তের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সঙ্গে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দায়িত্বও রাজ্যের ওপর ছাড়া হয়েছে। বুধবার এই প্রসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যদি পরবর্তী সময়ে রাজ্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১১ মে হবে বলেও জানা গিয়েছে।