কলকাতা: বঙ্গতনায়ার জোড়া শৃঙ্গজয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত গোটা রাজ্য৷ এভারেস্টের পর লোৎসেতে পা রেখেছেন চন্দননগরের মেয়ে পিয়ালি বসাক৷ পরপর দুটি শৃঙ্গ জয় করে কার্যত ইতিহাস লিখেছেন তিনি৷ কিন্তু তাঁর মাখায় ঋণের পাহাড়৷ আনন্দের মাঝেও চন্দননগর কাঁটাপুকুরের বসাক বাড়িতে তাই বিষাদের সুর৷
আরও পড়ুন- জেদের প্যাডেল ঘুরিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ছোট্ট সায়ন্তিকা, গাল টিপে আদর মমতার
নেপালের পায়োনিয়ার মাউন্টেনিয়ারিং এজেন্সি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বকেয়া টাকা না পেলে জোড়া শৃঙ্গজয়ের শংসাপত্র দেবে না তারা। জোড়াশৃঙ্গ জয়ের সাফল্য উদযাপনের সুযোগ আদৌ মিলবে কি? সংশয়ে পিয়ালির পরিবার। মঙ্গলবার রাতেই এজেন্সি থেকে ফোন আসে৷ এক ফোনেই ঘুম উড়েছে পরিবারের৷ পিয়ালির মা-বোনের কথায়, এই সমস্যার পাহাড় জয় করা এভারেস্ট বা লোৎসের শিখড় জয়ের চেয়েও কঠিন। বসাক পরিবার বা পিয়ালি, কেউই জানেন না কী ভাবে এই টাকার জোগাড় হবে৷ কারণ দুই-এক হাজার টাকা তো নয়, প্রায় ১২ লক্ষ টাকার ধাক্কা।
দীর্ঘদিন ধরেই এভারেস্ট জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পিয়ালি। তবে তাঁর এভারেস্ট জয়ের পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ। সব রকম ভাবে চেষ্টা চালিয়েও ১৮ লক্ষ টাকার বেশি হয়নি। এ দিকে, এভারেস্ট অভিযানের জন্য প্রয়োজন ৩৫ লক্ষ টাকা৷ নেপাল সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, পুরো টাকা না পেলে তারা এভারেস্ট অভিযান করতে দেবে না৷ এই অবস্থায় ফেসবুকে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থ সাহায্যের আবেদন করেন পিয়ালি। সেখান থেকে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা জোগাড় হয়৷ তখনও বাকি ১২ লাখ।
মঙ্গলবার বিকেলে মেয়ের জোড়া শৃঙ্গ জয়ের খবর আসতেই চন্দননগরের বসাক বাড়িতে ছিল খুশির আমেজ। কিন্তু রাত থেকে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। থমথম গোটা বাড়ি৷ কী ভাবে সমস্যার সমাধান হবে তা জানেন না বসাক বাড়ির কেউ৷ পিয়ালির বোন তমালি বসাক বলেন, কিছু বলার নেই। জানি না কী ভাবে টাকা আসবে। বাড়ি বন্ধক দিতে চেয়েছিলাম, সেটাও হয়নি। কিছু সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা নিয়ে জলঘোলা চলছে। ফলে, সামিট এজেন্সি যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নিতে হবে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>
পিয়ালির বৃদ্ধা মা স্বপ্না বসাকের এখন একটাই প্রশ্ন, মেয়েটা কষ্ট করে শৃঙ্গ জয় করল, কার কি কোনই মূল্য থাকবে না? উত্তর দিতে পারেননি ঘনিষ্ঠরা৷ এমনকী স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার মোহিত নন্দীর কাছেও এর জবাব নেই। তিনি বলেন, অভিযানের আগে অনেক মানুষ সাহায্য করেছেন। কিন্তু এখন আর কোনও সাহায্যের আশ্বাসও মিলছে না। এজেন্সির অন্যতম কর্তা পাসাং শেরপা বুধবার সাউ জানিয়েছেন, আমাদেরও অনেক কাজ করতে হয়। এর জন্য টাকার প্রয়োজন। পিয়ালিদেবীকে আমরা সামিট করতে বাধা দিইনি। ওঁর বাড়ি ফিরার পথেও বাধা নেই। কিন্তু টাকা না পেলে শংসাপত্র দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, এটা কোনও ট্রাস্ট নয়৷ সামিট করানোর টাকায় আমাদের মতো বহু মানুষের সংসার চলে৷