চিকিৎসকরা নন, এবার প্রসব করাবেন নার্সরা, বাংলায় আসছে নতুন মডেল

চিকিৎসকরা নন, এবার প্রসব করাবেন নার্সরা, বাংলায় আসছে নতুন মডেল

কলকাতা: বিশ্বের অধিকাংশ আধুনিক দেশেই চালু রয়েছে এই মডেল৷ যেখানে চিকিৎসকরা নন, জটিলতাবিহীন নর্মাল ডেলিভারি করান প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সরা৷ সেই মডেল এবার চালু হতে চলেছে আমাদের রাজ্যে৷ সেই সঙ্গে পাল্টাতে চলেছে প্রসবের প্রথাগত নিয়ম। তবে কোনও অন্তঃসত্ত্বার প্রেশার, সুগার, হার্টের সমস্যা, রক্তের অসুখ কিংবা ক্যান্সারের মতো গুরুতর সমস্যা থাকলে প্রসবে জটিলতার আশঙ্কা (হাই রিস্ক ডেলিভারি) দেখা দিতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে  সাহায্য নেওয়া হবে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার শিক্ষক চিকিৎসকদের। আমাদের দেশে এই মডেল কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গেও তা রূপায়ণের কাজ শুরু হয়েছে৷ এই কাজে সাহায্য করছে ইউনিসেফও। 

আরও পড়ুন- সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী বঙ্গে, পজিটিভিটি রেটও বাড়ল

এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণকেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল মিডওয়াফারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বাংলায় তার প্রধান ‘সেন্টার’ হল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যেই ১২ জন বিএসসি এবং তদূর্ধ্ব শিক্ষিত নার্সদের তেলেঙ্গানায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে ছ’মাসের বিশেষ কোর্সের জন্য। আগামী মাসে তাঁরা রাজ্যে ফিরবেন৷ এর পরেই তাঁদের ধাত্রীবিদ্যার পরবর্তী প্রশিক্ষণ দেবেন ইউনিসেফ ও অন্যান্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। সেই পর্ব শেষ হলে ওই ১২ জন নার্সই হবেন এ রাজ্যের প্রশিক্ষক।  ধাপে ধাপে তাঁরা অন্যান্য জায়গায় নার্সদের ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণ দেবেন। 

প্রথা বদলে নার্সদের মাধ্যমে প্রসব করাতে এনআরএস হাসপাতালে তৈরি হয়েছে পৃথক মিডওয়াইফারি লেড লেবার রুম৷ এনিয়ে রোগীর পরিবারের সংশয় কাটিয়ে বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জটিলতাহীন প্রসবের ক্ষেত্রে এটাই বিশ্বের আধুনিক দেশগুলির মডেল। তাঁরা জানাচ্ছেন, এটি মডেল অনুসরণ করা হলে হাই রিস্ক প্রেগনেন্সিতে যেমন অনেক বেশি সময় দিতে পারবেন শিক্ষক চিকিৎসকরা, তেমনই কমানো সম্ভব হবে মাতৃমৃত্যুর হার। এছাড়াও আটকানো যাবে অপ্রয়োজনীয় সিজারের ঝোঁক। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকারি হাসপাতালগুলিতে কর্মী ও চিকিৎসকের সঙ্কট৷  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মডেল চালু হলে ক্রমাগত বাড়তে থাকা প্রসব করানোর চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।

এনআরএস হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ পীতবরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘১২ জন নার্স এই পরিকল্পনা রূপায়ণের প্রশিক্ষণ নিতে তেলেঙ্গানায় গিয়েছেন। প্রশিক্ষণ পর্বের পর এনআরএস-এই রাজ্যের নিজস্ব ইনস্টিটিউট চালু করা সম্ভব হবে। যেটুকু বুঝছি, তাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে বাংলা।’’ এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার প্রধান ডাঃ সুভাষ বিশ্বাসও এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, বিশ্বের সমস্ত আধুনিক দেশে এই মডেলই অনুসরণ করা হয়। এ রাজ্যেও তা চালু করা হলে, নিশ্চিত ভাবেই তা তাৎপর্যপূর্ণ হবে৷