জলপাইগুড়ি: মা। ছোট্ট শব্দ। কিন্তু তার গভীর মানে। ছোট থেকে বড় হওয়ার প্রতিটা ধাপে দরকার মাকে। মা ভরসা। মা মানে বিশ্বাস। কথায় আছে, মায়ের ঋণ শোধ করা যায় না৷ সন্তান ছোট থাকলে আঙুলের ছোঁয়া থাকে মায়ের। সন্তান বড় হলেও মায়ের কাছে তারা সেই ছোটই। আন্তর্জাতিক মাতৃদিবসের আগে জীবনের সেই পাঠই দেওয়া হল ধূপগুড়ির বারোঘরিয়া বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল ‘মা পুজো’। কথাটা শুনলে অবাক হতেই হবে।
ধুপগুড়ির বারোঘরিয়া বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৮ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে শনিবার অনুষ্ঠিত হল এই বিশেষ অনুষ্ঠান। ছাত্রছাত্রীদের মায়েরা উপস্থিত ছিলেন। বলা ভালো, তারাই এদিনের বিশেষ অতিথি। পড়ুয়ারা তাদের মায়েদের পুজো করলেন। মাতৃরূপে সারা জীবন যেন তাদের সম্মান জানানো হয়। সেই শিক্ষাই দেওয়া হল স্কুল থেকে। পরম যত্নে মায়েদের পা ধুয়ে দিল সন্তানরা। মুছিয়ে দিল তারা পরম যত্নে। এখানেই শেষ নয়। প্রত্যেক পড়ুয়ার হাতে পায়েসের বাটি। সেই পায়েস মায়ের মুখে তারা তুলে দিল। আটপৌড়ে মায়েরা তখন আবেগে আপ্লুত। গলায় অনেকের তখন কান্না দলা পাকিয়ে রয়েছে। অনেক মায়ের চোখের কোনায় জল। সন্তান তাদের কাছে পরম ভালোবাসার, স্নেহের। সেই সন্তানকে মায়েরা সব সময় আগলে রাখেন যে কোনও ঝড়ঝাপটায়। মায়েরাও সন্তানকে কাছে টেনে নিলেন একলহমায়। পরম স্নেহে পায়েস খাইয়ে দিলেন তারাও। এই মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।
কমলা রায় এবং পুস্প রায় ঘরকন্যা সামলানো দুই মা। তারা জানান, খুব ভালো লাগছে। এখন কিছু বাচ্চা বড় হয়ে বাবা- মাকে দেখে না। বৃদ্ধ বয়সে তাদের অবহেলা করা হয়। ছোটোবেলা থেকে বাচ্চাদের মধ্যে এই নীতিবোধ, দায়িত্বশীলতা এবং বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসা শেখাতে এই ধরনের উদ্যোগ যথেষ্ট কাজে লাগবে। পড়ুয়া সুরস্মৃতি রায় বলে, খুব ভালো লাগল মাকে পূজো করে। মায়ের ভালোর জন্য এবং ভবিষ্যতে বাবা মায়ের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হবার প্রতিজ্ঞা নিয়েছি।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জয় বসাকের নেতৃত্বে বহু সুনাম কুড়িয়েছে এই স্কুল। শিক্ষারত্ন সন্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। শিক্ষক, পড়ুয়াদের মধ্যে সম্পর্কও অত্যন্ত নিবিড়। এর মধ্যেই সার্টিফিকেট অফ এপ্রিসিয়েশন, শিশু মিত্র, জেলার সেরা শিরোপা অর্জন করেছে এই বিদ্যালয়। আর এবার মা পুজো। আরও একটি নজির গড়ল এই স্কুল। আগামীর ভবিষ্যৎদের বোধোদয়ের নতুন পাঠ দেওয়া হল৷ বাবা- মাকে যেন সারাজীবন মাথায় সম্মানের সঙ্গে রাখা হয়৷ সেই বার্তাই দেওয়া হল অনুষ্ঠান থেকে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা শিক্ষারত্ন জয় বসাক বলেন, এই ধরনের মা পুজো ইন্দোনেশিয়ার প্রতিটা স্কুলে হয়ে থাকে এবং সেখানে কোনও বৃদ্ধাশ্রম নেই। তারপরই ভেবেছি আমাদের স্কুলে এই পুজো করলে বাচ্চাদের বাবা মায়ের প্রতি আরও দায়িত্বশীল করে তোলা যাবে।
রামকৃষ্ণ দেব মাকে ঈশ্বরজ্ঞানে দেখতেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার মাকে বরাবর শৃঙ্খলমুক্ত করার স্বপ্ন দেখতেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য সাঁতরে দামোদর পেরিয়েছিলেন। আজ শহুরে সভ্যতায় অনেক পরিবারের বৃদ্ধ বাবা- মায়ের ঠিকানা হয় ওল্ডেজ হোম৷ সম্পত্তির লোভে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার ঘটনাও আকছার হচ্ছে৷ আজ রবিবার আন্তর্জাতিক মা দিবস। সেখানে নতুন করে ‘মায়ের বুকে ঘুমায় ছেলে’র বার্তা দিল এই স্কুল।