সাংবাদিক স্বামীকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ সদ্যবিবাহিত স্ত্রী, মান ভাঙাতে স্ত্রীর হাতে ক্যামেরা তুলে দিলেন স্বামী!

সাংবাদিক স্বামীকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ সদ্যবিবাহিত স্ত্রী, মান ভাঙাতে স্ত্রীর হাতে ক্যামেরা তুলে দিলেন স্বামী!

কলকাতা: স্বামী পেশায় সাংবাদিক৷ খবরের খোঁজে সকাল থেকে রাত ছুটে চলা তাঁর৷ যখন তখন বেড়িয়ে পড়তে হয় খবরের সন্ধানে। এ যে ১০টা-৫টার সরকারি চাকরি নয়। কিন্তু সদ্য বিবাহিত স্ত্রী সে সব বুঝবে কী ভাবে? স্বামীর ব্যস্ততায় একাকীত্ব গ্রাস করেছিল স্ত্রীকে। কিন্তু, বুক ফাটলেও, মুখ ফোটে না তাঁর৷ আড়ালে চোখের জল পড়ে৷ তবে, শত ব্যস্ততার মাঝেও স্ত্রীর অভিমান নজর এড়ায়নি সাংবাদিক স্বামীর৷ স্ত্রীর মন ভালো করতে দারুণ উপায় বার করলেন তিনি৷ 

আরও পড়ুন- ফের দিল্লি যেতে পারেন মমতা! মোদী-সাক্ষাতের সম্ভাবনা

দু’মাসের প্রেম পর্বের পর সাত পাকে বাঁধা পড়েন নদিয়ার সাংবাদিক সুরজিৎ দাস এবং কুহেলি৷ তাঁদের বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই হাঁসখালির ঘটনায় তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য৷ বুম হাতে ছুটতে হয় সুরজিৎকে৷ নতুন জীবনে যখন মেয়েরা স্বামীকে পাশে চায়, তখন হন্যে হয়ে খবর সংগ্রহ করছেন সুরজিৎ৷ খবরের খোঁজে দিনরাত পড়ে রয়েছেন হাঁসখালির অকুস্থলে৷ এদিকে, ক্রমেই বাড়ছিল স্ত্রীর অভিমান৷ স্ত্রীর মান ভাঙাতে তাই অভিনব পন্থা নিলেন সাংবাদিক স্বামী৷ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই বেড়িয়ে পড়লেন খবর সংগ্রহের কাজে৷ বুম-ক্যামেরার পাশাপাশি সুরজিতের সঙ্গী হলেন স্ত্রী কুহেলি৷  হাঁসখালিতে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে খবর সংগ্রহের সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷ 

মাত্র দু’মাসের প্রেম৷ সোশ্যাল মিডিয়া পরিচয়৷ তার পরেই ঘটা করে বিয়ে হয় শান্তিপুরের শ্যামনগরের বাসিন্দা সুরজিৎ ও কৃষ্ণনগরের মেয়ে কুহেলির৷ তাঁদের বিয়ের বয়স মাত্র চার মাস৷ কিন্তু, বিয়ের পর কুহেলি দেখলেন, তাঁর স্বামী বড়ই ব্যস্ত মানুষ৷ কোথায় খুন হচ্ছে, কোথায় ডাকাতি কিংবা নারী নির্যাতন, ছুটতে হচ্ছে তাঁকে৷ যা দেখে মন ভেঙেছিল তাঁর৷ সুরজিতের কথায়, ‘‘ভালোবেসে চার মাস আগে বিয়ে করেছি৷ কিন্তু প্রতিদিন প্রচুর খবর থাকে৷ সেখানে ছুটতে হয়৷ ওঁর সঙ্গে সেভাবে সময় কাটাতে পারছিলাম না৷ হানিমুনেও যাওয়া হয়নি৷ এর জন্য ও হতাশায় ভুগছিল৷ বাড়িতে মুখ গোমরা করে বসে থাকত৷ তাই ভাবলাম ওঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলে ক্ষতি কী! ও এই পেশাকে নিয়ে ভীষণ আগ্রহী৷ খুবই সাপোর্টিভ৷’’ সুরজিতের কথায়, ‘‘সব সাংবাদিকের স্ত্রীর এমনই হওয়া উচিত৷’’ 

আপাতত হাঁসখালির ঘটনার রিপোর্টিংয়ের ব্যস্ত সুরজিৎ। স্বামী যখন হাতে বুম নিয়ে দাঁড়ায়, তখন ক্যামেরার ওপ্রান্তে থাকেন স্ত্রী কুহেলি। স্বামীর সঙ্গ পাওয়ার পাশাপাশি বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ধীরে ধীরে হাত পাকাচ্ছেন সাংবাদিকতায়। কুহেলিও আগামী দিনে কেরিয়ার হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিতে চান। সুরজিতের কথায়, “স্ত্রী যদি সাংবাদিক হতে চান তাতে আপত্তি নেই।”

কুহেলি বলেন, ‘‘সুরজিৎ কাজ পাগল মানুষ৷ আমি সারাদিন বাড়িতে একা থাকতাম৷ কাজের সমস্যা হবে বলে একটা ফোনও করতে পারতাম না৷ আমার কষ্টটা ও বুঝতে পারে এবং আমাকে সঙ্গে নিয়ে যায়৷ আমিও এই পেশাকে ভাসোবেসে ফেলেছি৷’’

তবে কথায় আছে, দূরে থাকলে নাকি বাড়ে। তবে এ কথা মানতে নারাজ সুরজিৎ৷ তাঁর কথায়, “একসঙ্গে থাকলে প্রেম বাড়ে বই কমে না। ও আমাকে সাহায্য করে কাজে। কাজটা ঠিকমতো করে দিই। তাই অফিস থেকে বাধা দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।”

সুরজিৎ ও কুহেলির প্রেম এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সাংবাদিকদের জীবনে সময়ের অভাবকে পাশে সরিয়ে কীভাবে সঙ্গীকে পাশে নিয়ে চলা যায়, তা নতুন করে শিখিয়ে দিলেন সুরজিৎ৷ যা দেখে রীতিমতো আপ্লুত নেটিজেনরা৷