রামপুরহাট: ছেলে হারিয়েও শোক পালন করার ফুরসত টুকুও নেই। প্রাণ বাঁচানোর আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু উপায়ন্তর নেই। তাই আতঙ্কে গ্রাম ছাড়লেন মৃত উপপ্রধান ভাদু শেখের পরিবার৷ এদিন সন্ধ্যেয় বাক্স, প্যাঁটরা গুটিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার তোড়জোড় করতে দেখা যায় ভাদু শেখের পরিবারকে৷ কোথায় যাচ্ছেন? নিহত ভাদুর বাবা মারফত শেখ বলেন, ‘‘আমাদের নিজস্ব সুখ যেখানে পাব সেখানে যাব৷’’ খানিক থেমে বৃদ্ধ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, ‘‘রাত্রি বেলা ছেলেকে মেরে দিল৷ আমি কোন ভরসায় এই গ্রামে থাকব, আপনি বলতে পারেন?’’ জবাবও দিয়েছেন নিজেই, ‘‘যে নেতাদের জন্য আমি সর্বহারা হলাম, জমি বিক্রি করে আমি পার্টি করেছি, সেই নেতারা যদি নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আমাদের দিকে না তাকায়, তাহলে থেকে লাভ কি?’’
বস্তুত ভাদু শেখ খুন হওয়ার পরই সোমবার গভীর রাত থেকে জ্বলতে শুরু করেছে রামপুরহাটের বগটুই গ্রাম৷ সোমবার রাতে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় রামপুরহাটের বর্ষার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখের। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে থেকেই মৃত উপপ্রধানের অনুগামীরা এলাকায় তাণ্ডব চালাতে থাকে বলে অভিযোগ। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক বাড়ি। আর সেই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্ততপক্ষে ১০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তারই জেরে এবার আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত পরিবারের।
কোথায় যাচ্ছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট করতে চাননি তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘অনেক রাজনীতি হল৷ আর এসবের মধ্যে থাকতে চাই না৷ তাই গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত৷’’ স্বাভাবিকভাবেই, নিহত উপ প্রধানের পরিবার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এলাকার অন্যান্য গ্রামবাসীর মধ্যেও তৈরি হয়েছে তীব্র আতঙ্ক৷ গ্রামে চলছে পুলিশি টহল৷ তবে উত্তেজনায় ফুটতে থাকা গ্রামে রাতারাতি যেন নেমে এসেছে শ্মশানের নীরবতা৷
বাবা, মা-সহ ভাদু শেখরা ৬ ভাই ছিল। আট মাসে আগে বাড়ি ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন ভাদু শেখের মেজো ভাই। জানা গিয়েছিল, রাস্তায় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এর পর সেই একই কায়দায় সোমবার রাতে খুন হন তৃণমূলের উপপ্রধানকে বলে পরিবারের দাবি।