কলকাতা: এ যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়ালের গল্প। এসএসসি, টেট দুর্নীতির মামলায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। তার মধ্যেই উঠে এল অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক তরুণী মডেলের নাম। তার যোগসূত্র ধরে মডেলের ফ্ল্যাটে গিয়ে রীতিমতো চক্ষুচড়কগাছ ইডির আধিকারিকদের।
বস্তায় বস্তায় বন্দি টাকার বান্ডিল বার হতে থাকে। প্রাথমিকভাবে আন্দাজ করা হয় ২০ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে তার ফ্ল্যাট থেকে৷ অঙ্ক আরও বেশিও হতে পারে আগামীতে। জানা যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে তাদের পরিচয় হয়। প্রশ্ন উঠেছে, বস্তাবন্দি এত টাকা এল কি করে তার কাছে? তাহলে কি এই টাকাই এসএসসি ও টেট দুর্নীতিতে হাতবদল হয়েছিল? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি এই টাকার সরাসরি কোনও যোগাযোগ আছে? দফায় দফায় ওই তরুণীকে জেরা শুরু করেন ইডি আধিকারিকরা। টাকা গোনার মেশিন নিয়ে আসেন ব্যাঙ্কের অফিসাররা।
কিন্তু কে এই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়? কীভাবে এলেন লাইমলাইটে? দক্ষিণ কলকাতায় এই ফ্ল্যাটেই বা তিনি এলেন কী করে? তথ্য ঘেঁটে জানা যাচ্ছে, অর্পিতা পেশায় একজন মডেল অভিনেত্রী। বেশ কিছু বাংলা ছবিতেও কাজ করেছেন। টলিউডের সঙ্গে তার যোগ কতটা? সেই সম্পর্কে খোঁজখবর করতে দেখা যায়, তেমন কিছু ছাপ ফেলতে পারেননি তিনি৷ হাতে গোনা কয়েকটি বাংলা সিনেমার পার্শ্বচরিত্রে কেবল অভিনয় করেছেন।
জিৎ-স্বস্তিকা অভিনীত ‘পার্টনার’ এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ‘মামা ভাগ্নে’ ছবিতেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই শিল্পমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এই অভিনেত্রী। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ শীর্ষক ছবিতেও তাকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু কোনও উন্নত অভিনয়ের ছাপ দেখা যায়নি৷ অর্পিতা ২০১১ সালে ‘বিদেহীর খোঁজে রবীন্দ্রনাথ’ নামের একটি সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। সে বছরই অর্পিতার সঙ্গে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রীর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আলাপ হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। সেই যোগাযোগ ঘনিষ্ঠতার দিকে যেতে বেশি সময় নেয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
বাংলা সিনেমায় তেমন কিছু সাফল্য আসেনি অর্পিতার।’চিন্নামা লাভ’ নামে একটি তামিল সিনেমায় ২০১৭ সালে অভিনয় করেন তিনি। বেশ কিছু ওড়িয়া ছবিতেও অভিনয় করেন। অভিনেত্রী হিসেবে এই তার ছোট্ট কেরিয়ার। তবে মডেল দুনিয়ায় তিনি কাজ করেন। ২৮ বছর বয়সী অর্পিতা মডেল হিসেবে কিছুটা পরিচিতিও পেয়েছিলেন।
মন্ত্রীকে নিজের গুরু মানতেন অর্পিতা। এবারের গুরুপূর্ণিমায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি আপলোড করে সম্মান জানিয়েছেন তিনি। নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর সঙ্গেও তিনি জড়িয়ে গিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, এই পুজোর থিম সঙের অ্যালবামেও বিতর্কিত এই অভিনেত্রীর ছবি ছিল। তাকে পুজোয় ব্র্যান্ড এম্বাসাডরও করা হয়। এইসবই কি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ বলেই সম্ভব হয়? প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। অর্পিতার বাড়ি থেকে ২০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। কী করে এল টাকা? কত টাকা উপার্জন করলে এত টাকা রাখা সম্ভব? তার থেকেও বড় কথা এই টাকা হিসাব বহির্ভূত। এই টাকা কি তাহলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের?
২০ টি দামী মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছে তার ফ্ল্যাট থেকে। Apple এর দামী দামী ফোন এল কী করে? কে দিল এত টাকা? শুধু তাই নয়, টালিগঞ্জ করুণাময়ীর অভিজাত বহুতল ডায়মন্ড আবাসনে মুখোমুখি দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। দিন কয়েক আগে হাইকোর্টের এক বিচারপতির মন্তব্যেও এই ফ্ল্যাটের কথা উঠে আসে। আরও অনেক সম্পত্তি আছে অর্পিতার। এই কথাই মনে করছে ইডি আধিকারিকরা। সেই সম্পত্তির খোঁজ নেওয়াও শুরু হবে। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন, ওই টাকার মালিক কে? কতটা ঘনিষ্ঠ পার্থ- অর্পিতা?