ফোন রেকর্ডিংয়েই কামাল, ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্ত SI-এর বিরুদ্ধে DG- কে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ হাই কোর্টের

ফোন রেকর্ডিংয়েই কামাল, ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্ত SI-এর বিরুদ্ধে DG- কে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ হাই কোর্টের

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রযুক্তি আজ যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে অনেক কঠিন বিষয়ের সমাধান মুহূর্তে হয়ে যাচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে ফোন রেকর্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। ফোনের কথোপকথন কখনও দোষীকে ধরিয়ে দিচ্ছে, আবার কখনও নির্দোষ ব্যক্তি মুক্তি পাচ্ছেন। সবচাইতে বড় কথা আদালত ফোন রেকর্ডিং সম্পর্কে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ শুনিয়েছে। তেমনই একটি ঘটনায় রাজ্য পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য পুলিশের ডিজি ওই সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে যাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন সেই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এক্ষেত্রে ফোন রেকর্ডিং থাকায় এক ব্যক্তি ন্যায়বিচার পেতে চলেছেন। যে ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে পুলিশ মহলে। 

উল্লেখ্য এক লক্ষ টাকা না দিলে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে, এমনই হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নদিয়ার চাপড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর চন্দন সাহার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা রুজু করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। কি ঘটনা ঘটেছিল সেখানে? একটি মামলায় জেল হাজতে রয়েছেন নদিয়ার চাপড়া থানা এলাকার এক ব্যবসায়ী। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপড়া থানার এসআই চন্দন সাহা এক লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন বলে অভিযোগ। এরপরই নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে  অভিযোগ। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। সেই সঙ্গে ওই সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে কথাবার্তার কল রেকর্ডিং আদালতে জমা করেন তাঁরা। এরপর সেই রেকর্ডিংটির সত্যতা যাচাই করার দায়িত্ব সিআইডিকে দেয় আদালত। সেটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আদালতে সিআইডি জানায়, ব্যবসায়ীর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য। আর সিআইডির কাছ থেকে এই রিপোর্ট পাওয়ার পরই অভিযুক্ত সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন পদে কর্মরত অফিসার বা সাধারণ পুলিশকর্মীদের সিংহভাগ সততার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। রোদ, ঝড়, জল উপেক্ষা করে তাঁরা মানব সেবা করছেন। কিন্তু একশ্রেণির পুলিশকর্মী এতটাই অসৎ যে তাঁদের জন্য বহু সাধারণ মানুষকে চরম হেনস্থার মধ্যে পড়তে হয়। কোনও অপরাধ না করেও বহু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সেই অসৎ পুলিশকর্মীদের জন্য জেলের ঘানি টানতে হয়। ঘটনাচক্রে নদিয়ার ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে ফোন রেকর্ডিং থাকায় তাঁরা এবার সুবিচার পাবেন। কিন্তু রাজ্যের একটা বড় অংশ এসবে অভ্যস্ত নয়। তাঁরা টেকস্যাভি নন। তাই ফোন রেকর্ডিং সংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিষয় তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে কি এমন ঘটনা ফের কারও জীবনে ঘটলে তাঁরা উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করতে না পারলে তাঁদের রাতারাতি অপরাধী হয়ে যেতে হবে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে নদিয়ার ঘটনার পর। সবচেয়ে বড় কথা ওই সাব-ইন্সপেক্টরের এমন আচরণের জন্য গোটা পুলিশ মহলের বদনাম হচ্ছে। তাই প্রশ্ন, এই ঘটনার পর সতর্ক হয়ে অসৎ পুলিশকর্মীরা কি এবার নিজেদের বদলে ফেলবেন? সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে সবার।