তৃণমূলের সঙ্গে আইপ্যাকের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা

তৃণমূলের সঙ্গে আইপ্যাকের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা

কলকাতা: প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? আগামী দিনে আদৌ কি এক পথের পথিক হবে তারা? নাকি বিচ্ছেদ শুধু সময়ের অপেক্ষা? প্রশ্ন অনেক৷ জবাব অধরা৷ তবে জানা গিয়েছে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে আগামীদিনে তৃণমূল সম্পর্ক রাখবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

আরও পড়ুন- কলকাতা নয়, পুর নিগমের ফল প্রকাশের সময় উত্তরে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী

শনিবার বিকেলে কালীঘাটের দফতরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের সাত শীর্ষনেতার সঙ্গে ‘বিশেষ’ বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী৷ সেখানেই এই বিষয়টি স্পষ্ট করেন তিনি। বৈঠকে দলনেত্রী জানান, প্রয়োজনে তিনি  নিজে পিকে’র সঙ্গে কথা বলবেন। অতীতে তৃণমূলের সঙ্গে আইপ্যাকের কী চুক্তি হয়েছিল, দলের হয়ে আইপ্যাকের কী কাজ করার কথা ছিল, তারা কী কী কাজ করেছে, সমস্তটাই এবার নিজে বুঝে নিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ 

তৃণমূল-আইপ্যাক সম্পর্ক কি একেবারেই খাদের কিনারায়? রাজ্য-রাজনীতিতে তা নিয়ে জোর জল্পনা৷ ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করতে আসেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর৷ লোকসভা ভোটে বিজেপি’র কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট ছিল তৃণমূলের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে নামেন পিকে৷ একুশের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই থেকে ভোট কৌশল তৈরি, একাধিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি৷ তবে শুরু থেকেই দলের অন্দরে তাঁর এই গুরুত্ববৃদ্ধি ভালো চোখে নেননি অনেক বর্ষীয়ান নেতাই৷ কিন্তু তা বলে ২০১৯ থেকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে এই হৃদ্যতার বিষয়টি গোপন রাখেনি তৃণমূল। তবে গত কয়েক দিন ধরে সেই সম্পর্কই যেন অন্য দিকে মোড় নিয়েছে। 

তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া দলের অন্যান্য শীর্ষনেতাদের প্রতি আইপ্যাক কর্মীদের ভূমিকা দলে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। অভিযোগ আসছিল মমতার কাছেও৷ সেই সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর এ নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেন দলনেত্রীও৷ এরই মধ্যে পুরভোটের প্রার্থিতালিকা নিয়ে বিরোধ আইপ্যাকের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়৷ জানা গিয়েছে, দলের অনেক শীর্ষ নেতাও আইপ্যাকের কাজে ক্ষুব্ধ৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করে বিহিত চেয়েছিলেন৷ 

লকনউ উড়ে যাওয়ার আগেই মমতার মনোভাব স্পষ্ট হয়েছিল৷ আইপ্যাক কে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। তাই এই সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের জবাব দেব না।’’ দিন কয়েক  আগে ‘টেক্সট মেসেজ’ পাঠিয়ে পিকে মমতাকে জানান, তাঁরা আর তৃণমূলের সঙ্গে বাংলা, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে কাজ করতে চান না। সূত্রের খবর, মমতা এই বার্তা পাওয়ার পরেই তৎক্ষণাৎ জবাবে  দলনেত্রী বলেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।’ এর পরেই দেখা যায় হঠাৎ করে মমতার অফিসিয়াল টুইটার পেজ আনফলো করে দিয়েছে আইপ্যাক। সেই খবর চাউর হতেই ফের মমতাকে ফলো করা শুরু করে আইপ্যাক। 

গত আড়াই বছর আইপ্যাকের সঙ্গে যে ‘সুসম্পর্ক’ ছিল, তা প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। তবে  বিচ্ছেদ যে  চূড়ান্ত, তা বলা সম্ভব নয়৷  তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  নিজে সবটা ভাল করে দেখে-বুঝে নিয়ে নিজেই এ ব্যাপারে  সিদ্ধান্ত নেবেন। আপাতত কারও উপরেই তিনি ভরসা করছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *