জলপাইগুড়ি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। শিক্ষক নিয়োগে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মডেল ও অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্লাট থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ এবং অর্পিতা। আর এই আবহের মধ্যে নতুন করে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকার বদলি নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে এবার এক শিক্ষিকার ঘন ঘন বদলি নিয়েও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মাত্র দু’বছরের মধ্যে ওই শিক্ষিকার একাধিক বার বদলির ঘটনায় এই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়িতে মামলা শুনতে গিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শিলিগুড়ির শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির হাইস্কুলের শিক্ষিকা শান্তা মণ্ডল ২০১৯ সালে বীরপাড়া গার্লস হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগপত্র পান। কিন্তু স্কুলে যোগ দেওয়ার এক বছর পার হওয়ার আগেই শান্তা বদলির জন্য রাজ্যের শিক্ষা দফতরে আবেদন করেন। তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে মধ্যশিক্ষা পর্যদ। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর তাঁকে শিলিগুড়ির অমিয় গোপাল চৌধুরী স্মৃতি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। তবে অদ্ভুত ব্যাপার শান্তাদেবী ওই স্কুলে যোগ না দিয়ে শিক্ষা দফতরে ফের বদলির জন্য আবেদন জানান। আর অবাক করার ব্যাপার হল এবারও সেই আবেদন মঞ্জুর হয়ে যায়। তখন বীরপাড়া গার্লস থেকে তাঁকে শিলিগুড়ি শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। আর এই বদলি প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিলিগুড়ি শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক প্রসূন সুন্দর তরফদার। কিসের ভিত্তিতে বারবার শান্তাদেবীর বদলির আবেদন মঞ্জুর হয়েছে তা নিয়েই আদালতে আবেদন করেছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার মামলাটি জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ওঠে। এদিন এজলাসে মামলাকারীর আইনজীবী এক্রামুল বারি সওয়াল করতে গিয়ে জানান, রাজ্য সরকার বদলির ব্যাপারে আইন চালু করেছে। বদলির জন্য শিক্ষককে ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পের আওতায় আবেদন করতে হয়। তবে টানা পাঁচ বছর কোনও স্কুলে চাকরি করলে সেই আবেদন করতে পারেন তিনি। অথচ শান্তা মণ্ডল দু’বছরের মধ্যেই এত বার বদলি হলেন কীভাবে? এর পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি, আদালতে এমন বহু মামলা উঠেছে যে অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলির আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করা হয়নি। আবার শান্তার মতো কেউ অনায়াসে বদলি হয়ে যান। তবে কি এই বদলি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে কোনও অসাধু চক্রের হাত রয়েছে? এই প্রশ্ন তুলে উপযুক্ত তদন্তের দাবি করেন তিনি।
এদিনের মামলার শুনানিতে শিলিগুড়ির শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির হাইস্কুলে শান্তার নিয়োগপত্র বাতিল করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বীরপাড়া গার্লস হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগ দিতে হবে শান্তাদেবীকে। সেই সঙ্গে অবিলম্বে সিবিআইকে শান্তার নিয়োগের ব্যাপারে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়মের তোয়াক্কা না করে ওই শিক্ষিকাকে একাধিকবার বদলি করা হয়েছে কীভাবে? তবে কি এখানেও একটা অসাধু চক্র কাজ করছে? এখানেও কি রয়েছে টাকা পয়সার খেলা? বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর এই চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। তাই সিবিআই তদন্তে এ সম্পর্কে এবার কি কি উঠে আসে সেদিকেই চোখ থাকবে সবার।