ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় নড়েচড়ে বসছে সিবিআই? শুধুই জিজ্ঞাসাবাদ, নাকি মিলবে রেজাল্ট?

ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় নড়েচড়ে বসছে সিবিআই? শুধুই জিজ্ঞাসাবাদ, নাকি মিলবে রেজাল্ট?

f28c6b375c1c0c9ad698537d07381040

নিজস্ব প্রতিনিধি: শুধু সিবিআই তদন্ত করলেই হবে না, তার রেজাল্ট চাই। কয়েক মাস আগেই এ কথা বলতে শোনা গিয়েছিল দিলীপ ঘোষকে। এরপর সপ্তাহ দুয়েক আগে ফের তিনি বিষয়টি নিয়ে তোপ দাগেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটিকে। সেবার সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে  বিস্ফোরক অভিযোগ করে তাদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন দিলীপ। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় সিবিআই যে তদন্ত করছে তার চেয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির তদন্তেই তখন বেশি আস্থা রাখতে দেখা যায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। তাঁর কথায়, “সিবিআই যতদিন তদন্ত করছিল কেউ গ্রেফতার হচ্ছিল না, উদ্ধারও হচ্ছিল না। ইনকাম ট্যাক্সের কার্যকলাপের মধ্যেও ভূত ছিল। ইডি এসে সব মাটি করে দিল। ইডি যা করতে পারছে সিবিআই তা পারেনি। সর্ষের মধ্যেই ভূত আছে! সিবিআই দায়িত্ব নিয়েছিল, কিন্তু কিছু করতে পারেনি। তাই তৃণমূলের নেতারা চমকে গিয়েছেন। ভাবছেন ইডি কোথা থেকে হাজির হল?”

এখানেই থেমে থাকেননি মেদিনীপুরের সাংসদ। তিনি বিস্ফোরক ভঙ্গিতে বলেছেন, “সিবিআইয়ের একটি অংশের সঙ্গে সেটিং হয়ে গিয়েছিল তৃণমূল নেতাদের। সেটা বুঝতে পেরেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত কয়েক বছর ধরে সিবিআই তদন্ত চলছিল, কিন্তু কোনও ফল হচ্ছিল না। কোনও তথ্য আসছিল না, কেউ ধরা পড়ছিল না। আসলে সর্ষের মধ্যে ভূত ছিল। কিছু অফিসার বিক্রি হয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ লাখে, কেউ কোটিতে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে ইডি এখানে এসেছে। যাঁরা সেটিং করেছেন, তাঁরা এখন বলছেন ইডি কেন? কারণ এই কুকুরটা পোষ মানবে না, কামড়াবে। তবে অসুখ  অনুযায়ী ওষুধ কম হয়ে যাচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্তে নতুন করে গতি বাড়াল সিবিআই। মঙ্গলবার বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালকে ডেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। যদিও পরেশ জানিয়েছেন সিবিআই তাঁকে যতবার ডাকবে ততবার তিনি সাড়া দেবেন। পরেশ মনে করেন এভাবে তাঁকে হেনস্থা করা হচ্ছে। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় কেন পরেশকে ডেকেছে সিবিআই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। বিষয়টি নিয়ে পরেশের ব্যাখ্যা,” বেলেঘাটায় আমরাই তৃণমূলের সব কিছু, বিধায়ক বলুন, কাউন্সিলর বলুন সব। ওরা বিজেপি করে। ওরা তো কাউকে না কাউকে পার্টি করবেই।”

উল্লেখ্য বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর কাঁকুড়গাছি এলাকার বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুন হয়েছিলেন। অভিযোগ পরেশের নির্দেশে অভিজিতের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। অভিজিতের পরিবার পরেশ পাল-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই ঘটনাতেই মঙ্গলবার পরেশ পালকে ডেকে পাঠায় সিবিআই। তবে এর আগেও পরেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। এর পাশাপাশি সূত্রের খবর, ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় তদন্তের গতি আরও বাড়াবে সিবিআই। তবে কি সিবিআই সম্পর্কে দিলীপ ঘোষ যে অভিযোগ করেছিলেন তা ভুল প্রমাণ করতেই তদন্তের গতি এবার বাড়ানো হচ্ছে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। উল্লেখ্য দিলীপ সেই অভিযোগ করতে গিয়ে আরও বলেছিলেন, শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করলেই হবে না, রেজাল্ট চাই। অর্থাৎ সিবিআই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করুক, এটাই দেখতে চান দিলীপ।

স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল দিলীপ তথা বিজেপির এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছে। তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে সিবিআই তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তৃণমূলকে হেনস্থা করা হচ্ছে। বিজেপির অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে গত  বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসায় তাদের বহু কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এমনকী প্রাণভয়ে উত্তরবঙ্গের বহু বিজেপি কর্মী অসমে দীর্ঘদিন আত্মগোপন করেছিলেন। সেই সমস্ত ঘটনার তদন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে শুরু করে সিবিআই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওজনদার কোনও তৃণমূল নেতাকে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করতে পারেনি বলে প্রকাশ্যে বা ঘনিষ্ঠ মহলে দিলীপ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় পরেশকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিবিআই। তাই ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার তদন্তে সিবিআই গতি বাড়িয়ে দিলীপের দাবি মতো কোনও ‘রেজাল্ট’ দেয় কিনা এখন সেটাই দেখার।