কোটি কোটি টাকা, দামি গাড়ি নিয়েও টেন্ডার দেননি কেষ্ট, বিস্ফোরক দাবি দুই ব্যবসায়ীর

কোটি কোটি টাকা, দামি গাড়ি নিয়েও টেন্ডার দেননি কেষ্ট, বিস্ফোরক দাবি দুই ব্যবসায়ীর

কলকাতা:  অনুব্রত মণ্ডলের ভোলে ব্যোম রাইস মিলের গ্যারাজে একের পর এক দামি গাড়ি৷ সেখানেই রয়েছে WB 54U 6666 নম্বরের একটি ফোর্ড এন্ডেভার৷ অনুব্রতর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন সেই গাড়ির মালিক ও ব্যবসাসী প্রবীর মণ্ডল৷  আঙুল তুললেন বোলপুরের ব্যাবসায়ী অরূপ ভট্টাচার্যও৷ 

আরও পড়ুন- কতজনকে দেশে ঢুকিয়েছে? আল কায়দা জঙ্গিকে জেরায় বিস্ফোরক তথ্য

প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘ঠিকাদারির টেন্ডার পেতে ৪৬ লক্ষ টাকার গাড়ি দিয়েছিলাম অনুব্রত মণ্ডলকে৷ নগদ ৫ কোটি টাকাও দিয়েছিলাম৷ টেন্ডার না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে রীতিমতো হুমকি দিয়ে অনুব্রত বলেছিলেন, গাঁজা কেস দিয়ে দেব৷ তিনি আরও বলেছিলেন, গাড়িতে চাপবি নাকি প্রাণে বাঁচবি?’’ প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘তিলপাড়া বাঁধ সংস্কারের টেন্ডারের জন্য গাড়িটি দিতে হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে৷ এছাড়া আরও ৫ কোটি টাকা দিয়েছিলাম৷ গাড়ি ফেরত চাইতেই মেলে হুমকি৷ বলেন, জেলে থাকবি নাকি, গাড়ি চাপবি৷ আমাদের বেঁচে থাকা দুঃসহ করে তুলেছে৷ এত দিন ভয়ে কোনও অভিযোগ করতে পারনি৷’’ 

অন্যদিকে, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন সিউড়ির গাড়ি ব্যবসায়ী অরূপ ভট্টাচার্যের৷ তিনি বলেন, ‘‘ঠিকাদারির বরাত পেতে ওঁর ট্র্যাপে পড়ে গিয়েছিলাম৷ টেন্ডার পাইয়ে দিতে ১০ কোটি টাকা নগদ চেয়েছিলেন তিনি৷ দিয়েছিলাম ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা৷ অনুব্রত নিজের হাতে নিয়েছিলেন দেড় কোটি টাকা৷ বাকি টাকাটা দিয়েছিলাম সায়গল হোসেনকে৷ কিন্তু, টাকা দিলেও টেন্ডার পাইনি৷’’  অরূপবাবু আরও জানান, পঞ্চায়েত ভোটের সময় আড়াই কোটি টাকা দিয়েছিলেন তিনি৷ এছাড়াও ৪৬ লক্ষ টাকা দামের গাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি ও তাঁর পার্টনার৷ 

তাঁর কথায়, ‘‘২০১৭ সালে তিলপাড়া বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ শুরু করে প্রশাসন। সেই বরাত পাওয়ার কথা ছিল আমাদের৷ কিন্তু, জেলাশাসক কিছুতেই সরকারি অনুমোদন জোগাড় করতে পারছিলেন না। এর পরেই অনুব্রতবাবুর কাছে যাই৷ উনি সেচ দফতর থেকে NOC বার করে টেন্ডারও করিয়ে দেন৷ এর জন্য ১০ কোটি টাকা দাবি করেন৷ শেষ পর্যন্ত ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকায় রফা হয়৷’’ অরূপবাবু বলেন, ‘‘উনি ছাড়া এখানে গাছের একটা পাতাও নড়ে না৷ আমরা ওঁর ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলাম৷ এর পর নানা বাহানায় উনি টাকা চাইতেন৷ কখনও পুজো, কখনও ভোট৷ 

অরূপবাবুর আরও বলেন, ‘‘আমরা সকলে শেষ হয়ে গিয়েছি৷ ব্যবসা করার আর ক্ষমতা নেই৷ পুরো টাকা দিতে না পারায় আমাদের সাসপেন্ড করে দেন। সেই বরাত পাইয়ে দেন বালির টাকা তোলা ঝাড়খণ্ডের ব্যবসায়ীদের৷’’ তাঁর দাবি, ‘‘গোটা রাজ্যে অটোমোবাইল, পরিবহণ ব্যবসা শেষ করার মূলে রয়েছেন অনুব্রত৷ বালি তুললেই আড়াই হাজার টাকা তোলা, গরু নিয়ে গাড়ি প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা৷ সবেতে তোলা দিতে দিতেই শেষ গাড়ি ব্যবসায়ীরা৷’’ তাঁর কথায়, ‘‘জেলায় বালি ও পাথর খাদানের সব টাকা যায় অনুব্রতর ঘরে। প্যাডে টাকা তোলে। বালির ঘাট চালাতে গেলে টাকা লাগে। এই সবেরই কিং পিন উনি।’’