কলকাতা: ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক ঘটনা সামনে আসে। কিছু ঘটনা নিছক মজার। আবার কিছু ঘটনা নিজেকে যেন আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজেকে সত্যের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। তেমনি একটি ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কারও চোখে জল তো কেউ আবার সাহসকে কুর্নিশ দিচ্ছে।
এক যুবক পাঁচ বছর আগে প্রবীণ এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি শোধ দেননি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর যুবক অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন। মৃতদেহের সামনে সেই টাকা রেখে যুবক কান ধরে ওঠবোস করেন। এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে এক নেটিজেন পোস্ট করেন। তারপরেই সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন, অন্যায় স্বীকার করার সাহস সবার থাকে না। কেউ আবার বলছেন, উপলব্ধিটাই আসল। এখান থেকেই বোঝা যায় যুবকটি আসলে ভালো মনের মানুষ।
ফেসবুকে অর্পিতা সরকার নামের ওই নেটিজেন লেখেন, আজ একটা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হলাম। এটিএমের সামনে লম্বা লাইন। দাঁড়িয়ে আছি অন্তত ছয়-সাতজনের পিছনে। আমার পিছনে আরও ছয়জন। একটা ছেলে দেখলাম সবাইকে রিকোয়েস্ট করছে, প্লিজ আমায় আগে ছেড়ে দিন একটু, খুব দরকার আছে। সামনে একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। তাকেও গিয়ে অনুরোধ করছে বছর চব্বিশ-পঁচিশের ছেলেটা। বয়স্ক মানুষটি বললেন, তোমরা যদি আমাদের অনুরোধ কর কেমন লাগে দেখতে? আর এই লাইনে যারা দাঁড়িয়ে আছে সকলেরই তো আগে প্রয়োজন।
ছেলেটি বলল, আমার দরকারটা একটু অন্যরকম। এখনই নিয়ে যাবে মন্মথ জ্যেঠুকে। আমার শোধ করা হবে না আর। ওর কথা শেষ হবার আগেই শবযাত্রীর দল বলো হরি হরি বোল করতে করতে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ছেলেটা চেঁচিয়ে বলল, একটু দাঁড়াও মৃন্ময়দা দুমিনিট। উনি সম্ভবত মন্মথবাবুর ছেলে। ছেলেটা হাতজোড় করে বলল, প্লিজ আমায় একটু ছেড়ে দিন। আসলে জেঠু আমার বিপদের সময় ধার দিয়েছিলেন আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। তারপর টাকাটা শোধ দিতে হবে বলে জেঠুকে দেখলেই আমি অন্য রাস্তা ধরে নিতাম। জেঠু কোনোদিন চাননি। কাল মধ্যরাতে জেঠুর স্ট্রোক হয়,মারা যান। আমি টাকাটা শোধ দিয়ে দিতে চাই। নাহলে নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে যাব।
ছেলেটাকে সবাই ছেড়ে দিল। সে টাকা তুলে নিয়েই পাশের চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা শবযাত্রীর দলটার কাছে গেল। মৃতদেহের পায়ের কাছে টাকাটা রেখে কান ধরে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইল। অপলক তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটাকে। এতজন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অন্যায়টা স্বীকার করার ক্ষমতা রাখে ছেলেটা। আবার ঋণমুক্ত হবারও সাহস আছে। আমার বাবা আকস্মিকভাবে মারা যাওয়ার পরে নিজের লোকেদের মুহূর্তে পাল্টে যেতে দেখেছিলাম। ঋণীরা যেন সুযোগ পেয়েছিল ঋণ শোধ না করার। অস্বীকার করতে পারলে যেখানে মানুষ আর কিছু চায় না সেখানে এই বয়সের একটা ছেলের ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চাওয়া দেখে মনে হল, এইজন্যই তো বেঁচে থাকা। নোংরা ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ মুক্তো পাবার লোভেই তো বাঁচতে ইচ্ছে করে।’