শ্রীরামপুর: অনেকেই কটূকথা বলেছেন, অনেকে আবার ব্যঙ্গ বিদ্রুপও করেছেন৷ কিন্তু তাতে ডোন্ট কেয়ার৷ বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিঃসঙ্গ জীবনের একাকীত্ব কাটাতে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লেন ৭২ বছরের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ৷
আরও পড়ুন- প্রাক-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকোত্তর বৃত্তির আবেদন নেওয়া শুরু
হুগলী শ্রীরামপুরের বাসিন্দা সমরেন্দ্রবাবু প্রথম জীবনে কলেজের অধ্যাপক ছিলেন৷ রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজে বাংলা পড়াতেন তিনি।২০০৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন৷ বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের কালনায় একটি বেসরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষ তিনি৷ বেশ কয়েক বছর আগেই প্রয়াত হয়েছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী৷ একমাত্র মেয়ে থাকেন বিদেশে৷ এই লকডাউনে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন সমরেন্দ্রবাবু৷ একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷
বুঝতে পারেন, এই একাকী জীবনে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন৷ তাই আরও একবার বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি৷ কিন্তু এই বয়সে পাত্রী পাবেন কোথায়? পাত্রীর খোঁজ করতে তাই খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেন৷ ওই বিজ্ঞাপন দেখেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিষড়ার বাসিন্দা ইরা রায়৷ দুই পরিবারের কথাবার্তার পর গত ২৭ জুলাই ইরার সঙ্গে রেজিস্ট্রি করেন সমরেন্দ্রবাবু৷ সোমবার সামাজিকভাবে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা৷ সমরেন্দ্রবাবুর ফ্ল্যাটেই বসেছিল বিয়ের আসর৷ তবে বিয়েতে ছিল না কোনও পুরুষ পুরোহিত৷ সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণে বিয়ে দিয়েছেন মীনা রায়।
আরও পড়ুন- DA মামলায় এখনও নিশ্চুপ রাজ্য! তবে কি শীঘ্রই বড় ঘোষণা করবে সরকার?
সমরেন্দ্রবাবু জানান, তিনি পণ নেওয়ার বিরোধী৷ প্রথম বিয়েতেও পণ নেননি৷ এবারেও নয়৷ শুধুমাত্র একজন জীবন সঙ্গী পেতেই তাঁর ছাদনাতলায় যাওয়া৷ শ্রীরামপুরের ফ্ল্যাটে একাই থাকেন তিনি৷ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখার কেউ নেই৷ লকডাউনের মাঝে এই বিষয়টি আরও বেশি করে অনুভব করেন তিনি৷ এমনও হয়েছে, সারা দিন না খেয়েই কাটাতে হয়েছে তাঁকে৷ অনেক সময় আবার ছাত্রছাত্রীরা রান্না করে দিয়ে গিয়েছেন প্রিয় মাস্টারমশাইকে৷
আরও পড়ুন- BREAKING: ফের লকডাউনের দিন বদল নবান্নের, নজরে মাস পয়লা বেতন?
তাঁর বিয়ে করার এই সিদ্ধান্তে পাশে পেয়েছেন পরিবারকে৷ অনেকে সাধুবাদও জানিয়েছেন৷ অন্যদিকে বয়সে অনেকটাই বড় সমরেন্দ্রবাবুকে স্বামী হিসাবে পেয়ে খুশি ৩৬ বছরের ইরাদেবী৷ বয়সের ব্যবধানে আক্ষেপ নেই তাঁর৷ আগামী দিনগুলোতে তাঁর হাত ধরেই এগিয়ে যেতে চান৷ তিনি জানান, বাবাকে অনেকদিন আগেই হারিয়েছেন৷ কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন৷ কিন্তু লকডাউনে চাকরিটাও চলে গিয়েছে৷ সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞাপন দেখে সমরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি৷ বিয়ের কোনও পরিকল্পনা ছিল না তাঁর৷ তবে এমন একজন শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষকে পাশে পেয়ে তিনি খুশি৷